কোন কোন খাবারগুলো আদর্শ খাবার
স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল। আর স্বাস্থ্য নির্ভর করে সুস্থের উপরে। আমরা প্রতিদিন কোন খাবার কি পরিমাণে খাব তার উপর নির্ভর করে আমাদের সুস্থ জীবন। একটি স্বাস্থ্যকর জীবন তখনই সম্ভব যখন প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় আদর্শ খাবার যোগ করা হবে। আদর্শ খাবার সেই পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ খাবার যেখানে প্রতিদিনের চাহিদা মত খাবারের পুষ্টিমান নিশ্চিত করা হয়।
ভূমিকা
স্বাস্থ্য রক্ষায় আদর্শ খাবারের প্রয়োজনীয়তা অনেক। আপনি প্রতিদিন কতটা কর্মক্ষম থাকবেন অথবা আপনার স্বাস্থ্য রক্ষা কিভাবে করবেন যতটা আপনি আদর্শ খাবার গ্রহণ করবেন তার উপরে ভর করে । আদর্শ খাবারে থাকে ভিটামিন, খনিজ পদার্থ, আয়োডিন,আমিষ, শর্করা, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস সহ যাবতীয় প্রয়োজনীয় উপাদান।
আদর্শ খাবার কাকে বলে
যে খাবার বা খাদ্যে ছয়টি মৌলিক উপাদান বিদ্যমান থাকে এবং জীবের প্রয়োজনীয় সকল উপাদান নির্দিষ্ট মাত্রায় বিদ্যমান থাকে যেমন আমিষ,শর্করা, স্নেহ, ভিটামিন, খনিজ পদার্থ, পানি ইত্যাদি সব উপাদানই একটু একটু পাওয়া যায় তাকে আদর্শ খাবার বলে। জীবনে চলতে গিয়ে সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি নানা কাজকর্ম করতে হয়।
আর এই সকল কাজকর্ম করতে যে শক্তি বা কর্মউদ্যমের প্রয়োজন হয় তা পূরণ করতে না পারলে শরীরে ঘাটতি দেখা দেয়। আর এভাবে তৈরি হয় অসুস্থতা, অপুষ্টিজনিত নানা অসুখ-বিসুখ।তাই নিত্যদিনের খাদ্য তালিকায় আদর্শ খাবার রাখার বিকল্প নেই। সাধারণত আমিষ জাতীয় খাবার, শাকসবজি, ফলমূল ও দুধ খেলে যে সকল চাহিদা সমূহ রয়েছে তা সহজেই সারিয়ে তোলা সম্ভব। প্রতিদিন ফলমূল হিসেবে একটি আপেল ও একটি কলা রাখা উচিত।
তাছাড়া খাবারের বেলায় অনিয়ম করা উচিত নয়। প্রতিদিনের নাস্তা অথবা দিনের যেকোনো সময়ের খাবার গুলো সময় মতই খাওয়া উচিত। আপনি যে সময় খাদ্য গ্রহণ করেন প্রতিদিন ওই একই সময়ে খাদ্য গ্রহণ করুন। তাতে শরীরের উন্নতি ও সুস্বাস্থ্য উভয়ই বজায় থাকবে। তাছাড়া আমাদের প্রতিদিন যে পরিমাণ ক্যালরি খরচ হয় তা আসে আমিষ খাবার থেকে। যখন আপনি আমার সাথে খাবার বেশি খাবেন তখন শক্তি ও শরীরের বৃদ্ধি দুটোতেই বাড়তি সুবিধা পাবেন।
কোন কোন খাবারগুলো আদর্শ খাবার
সাধারণত আদর্শ খাবার বলতে আমরা সেই খাবারকে বুঝি যে খাবারে প্রাণীর জন্য প্রয়োজনীয় ছয়টি উপাদান বিদ্যমান থাকে। ১.প্রোটিন বা আমিষ, ২.শর্করা, ৩.কার্বোহাইড্রেট ৪.খনিজ পদার্থ ৫.ভিটামিন, পানি।
প্রোটিন বা আমিষ
আমিষ হচ্ছে সর্বোচ্চ শক্তি সম্পন্ন নাইট্রোজেন সমৃদ্ধ একটি জটিল যৌগ। এতে রয়েছে কার্বন, নাইট্রোজেন,হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন। আমাদের শরীরের হাড় পেশি তাছাড়া নাক,কান,চুল সবই প্রোটিন দ্বারা গঠিত। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এই protein। তাছাড়া শিশুদের মস্তিষ্ক বিকাশেও কাজ করে আমিষ।তাই প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় আমিষ রাখা জরুরী।
মাছ, মাংস, ডিম, ডাল, দুধসহ বেশ কিছু খাবারে আমিষ পাওয়া যায়।
ফ্যাট
শরীরের উন্নতি বা বিকাশে শর্করা জাতীয় খাদ্যের বিকল্প নেই। প্রতি এক গ্রাম ফ্যাটে রয়েছে নয় শতাংশ ক্যালরি। যা প্রোটিন ও কার্বোহাইড্রেট এর চেয়েও বেশি কার্যকরী।
মাখন ও ঘি, বাদাম, খাসির মাংসে ফ্যাট বা চর্বি উপস্থিতি রয়েছে। কাজেই খাবার তালিকায় আদর্শ খাবার হিসেবে এটি রাখা যায়।
কার্বোহাইড্রেট
শরীর সুস্থ রাখতে কার্বোহাইড্রেট ও শর্করা বহু অংশে ভূমিকা পালন করে। এটা জীবদের শক্তির প্রধান উৎস। সাধারণত এ খাদ্যে হাইড্রোজেন, কার্বন, অক্সিজেন পাওয়া যায়। সবুজ শাকসবজিতে যে কার্বোহাইড্রেট পাওয়া যায় শরীরে গ্লুকোজ তৈরি করে। যা কাজের জন্য প্রয়োজন। প্রতি একশো গ্রাম সবজিতে ১২-১৩ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট মিলে।
সবুজ শাকসবজি, মাশরুম ও মিষ্টিতে কার্বোহাইড্রেট পাওয়া যায়।
খনিজ পদার্থ
শরীরেকে কর্মক্ষম ও শক্তিশালী রাখতে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম সমৃদ্ধ খনিজ পদার্থের বিকল্প নেই। হৃদপিণ্ড ও মস্তিষ্কের কার্যক্রম, হরমোন বা এনজায়িম উৎপাদনে এই খনিজের উপাদানগুলোর অনেক ভূমিকা রয়েছে।
বাদাম, ডার্ক চকলেট অথবা কোকো পাউডার, অ্যাভোকাডোতে এই খনিজ পদার্থগুলোর প্রাপ্তি নিশ্চিত হয়।
ভিটামিন
ভিটামিন বা প্রাণশক্তি হলে জৈব পদার্থের একটি গোষ্ঠী। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি ও পুষ্টি জোগায়।ভিটামিনের অভাবে নানা অসুখ সৃষ্টি হয়।
পালং শাক, লেবু, কমলা, বেদানা, গাজর, মিষ্টি কুমড়া, মিষ্টি আলু ইত্যাদিতে ভিটামিনের উপস্থিতি পাওয়া যায়।
পানি
সাধারণত পান করা পানিতে অক্সিজেন পাওয়া যায়। দিনে ছয় লিটার পানি পানির অভ্যাস করা উচিত। অতিরিক্ত ঘাম অথবা পরিশ্রমে পানি পানির বিকল্প নেই। তাছাড়া যে কোনো পানি স্বল্পতা কিংবা ঘাটতি জনিত সমস্যায় পানি পান করুন।
আদর্শ খাবার রুটিন
এটি আদর্শ দিনতামামি খাবারের ধারণা দেওয়া হল। সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে একটি প্রাতরাশ, লুচি বা পরোটা সাথে ডাল কিংবা আলুর দম রাখতে পারেন। সাথে এক কাপ চা দুধ চিনি ছাড়া একদম গ্রিন টি। আর যদি মনে হয় সকালে লুচি খাব না তবে চা ও বিস্কুট খাওয়া যেতে পারে। আর যদি প্রয়োজন হয় তবে খানিক পরে অল্প একটু ভাত খেতে পারেন।
দুপুরবেলা, ভাত, ডাল, কিছু একটা ভাজা, একটা সব্জী, মাছ তরকারী বা মাছ ভাজা, মাংস,ডিম ভাজি দিয়ে দুপুরে খাবার সেরে ফেলুন। বিকেলে হালকা নুডুলস, চাওমিন, মুখরোচক কোন মাখা খেতে পারেন। রাতে প্রতি সামান্য ভাত, মাছের তরকারি, মাংসের ঝোল, সামান্য মিষ্টি, দুধ, কলা রাখতে পারেন।
রাতের আদর্শ খাবার
রাতে ৮-৯ টা শোবার অন্তত তিন ঘন্টা আগে রাতের খাবার খেয়ে নিন। সাধারণত বারোটার ভিতরে ঘুমিয়ে পড়ুন। অন্তত তিন ঘন্টা ঘুমান। সহজে হজমযোগ্য পানীয় খাবার জুস, স্যুপ খেতে পারেন। সঙ্গে রাখতে পারেন সালাদ। রাতে কখনই পেট ভরে খাবেন না এসিডিটি হতে পারে। রাতে রুটি খান অল্প করে। রাতে কিসমিস, আপেল, বেরি, পিচফল, দুধ খেতে পারেন। রাতে কোন ক্যালরিযুক্ত এবং হাই প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। শাকসবজি, আলু ভর্তা, সামান্য ডাল খাবার তালিকায় রাখতে পারেন।
দুধকে কেন আদর্শ খাবার বলে
একজন ব্যক্তির পক্ষে সারাদিনে প্রয়োজন অন্তত যতখানি গুণ প্রয়োজন তার সবটুকুই দুধে রয়েছে। তাছাড়া খনির জাতীয় পদার্থ ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম সবই রয়েছে দুধে। সহজেই হজমযোগ্য এবং উচ্চ আমিষ থাকায় সব বয়সী মানুষ দুধ খেতে পারে। একেবারে পেট রোগা না হলে দুধ নিষিদ্ধ নেই।
লেখকের মন্তব্য
সম্মানিত পাঠক, এটি আদর্শ খাবার জীবন ধারণের জন্য এবং সুস্বাস্থ্য রক্ষায় অত্যন্ত কার্যকরী। মানুষের জীবনে সারাদিন যতগুলো ভিটামিন ও উপাদানের প্রয়োজন তার সবটুকুই আসে আদর্শ খাবার থেকে। আপনি কি পরিমান আদর্শ খাবার গ্রহণ করছেন তার উপর নির্ভর করে আপনার স্বাস্থ্য ও দিনের কার্যক্রম কেমন যাবে। তাই সচেতন ব্যক্তি মাত্রই খাবার তালিকায় আদর্শ খাবার যুক্ত করা প্রয়োজন। আলোচনা ভালো লাগলে আমাদের সাথেই থাকুন। ধন্যবাদ।
আরএম আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়
comment url