ঘন ঘন মাথা ব্যথার কারণ কি

মানুষের অঙ্গসমূহের মধ্যে মাথা সবচেয়ে কার্যকরী ও প্রধানতম অঙ্গ। কেননা মাথা পুরো শরীরের নিয়ন্ত্রক। আজকালকের কর্পোরেট বিশ্বে কাজের চাপ, দুশ্চিন্তা, হতাশা, খাদ্যে ভেজাল ও নানাবিধ কারণে মানুষ মাথাব্যথায় আক্রান্ত হচ্ছে।
ঘন ঘন মাথা ব্যথার কারণ কি

ভূমিকা

মাথাব্যথা প্রত্যেকটি মানুষের জীবনে হয়ে থাকে। মাথা ব্যথা মানেই কোন অসুখ নয়। দুশ্চিন্তা, অবসাদ, ক্লান্তি অথবা সাইনোসাইটিস বা ঠান্ডা জনিত কারণে মাথা ব্যাথা দিতে পারে। মাথাব্যথাকে ইংরেজিতে Headache বলে।মাথা ব্যথা করলে প্রথম অবস্থায় ওষুধ খাওয়া উচিত নয়। মাইগ্রেন থাকলে মাথা ব্যথা হয়, শীতকালে টনসিলের ব্যথা তীব্র হলে মাথা ব্যথা দেখা দেয়। তাছাড়া সর্দি, কাশির ফলে মাথাব্যথা হতে পারে।

মাথার পেছনে ডান পাশে ব্যথা হওয়ার কারণ

মাথাব্যথার ধরণ ও অবস্থানের উপর নির্ভর করে অসুবিধার কারণ ও মাত্রা।আপনার মাথার কোন পজিশনে কতটা তীব্রতা নিয়ে কতক্ষন যাবত ব্যথা হচ্ছে তার ভিত্তিতে নির্ণিত হয় আপনি অসুস্থ কিনা এবং ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে কিনা।মাথাব্যথার অনেক গুলো কারণ থাকে।তার মধ্যে রাত্রিযাপন,ঠান্ডাজনিত কারণে,মাইগ্রেন সমস্যা কিংবা সর্দিতে শ্লেষ্মার উপস্থিতি বেশি পরিমানে থাকলে।

মাথার ডান পা বাম যে পাশে ব্যথা হোক না কেন তা মাইগ্রেনের সমস্যা হতে পারে। মাইগ্রেনের বহু কারণ থাকতে পারে তবে সতর্কতার একমাত্র চিকিৎসা। কেননা ব্যথার মুহূর্তে অথবা অব্যবহিত পরে যে কোন চিকিৎসার মাধ্যমেই এ রোগ নিরাময়ে শতভাগ নিশ্চয়তা দেয়া যায় না।

মাথার পেছনে বাম পাশে ব্যাথা হওয়ার কারণ

মাথার পেছনে অথবা বাম ডান যেকোনো পাশে ব্যথা অনুভূত হলে এবং এবং তা যদি পুরো মাথা জুড়ে আন্দোলন সৃষ্টি করে তবে বুঝতে হবে এটা মাইগ্রেনের সমস্যা। একাধিক কারণ থাকতে পারে মাইগ্রেনের ব্যথায়।তবে নিরাময়ে সম্ভাবনা ক্ষীণ।অল্প সময় মাইগ্রেনে ব্যথা থেকে আরাম পেতে কাছ থেকে বিরতি দেওয়া শ্রেয় এবং বিশ্রাম করা জরুরী।

মাথা ভারী লাগার কারণ

মাথা ভারী লাগার প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন এটি ব্রেইন স্ট্রোকের প্রাথমিক কারণ। তাই কাল বিলম্ব না করে এমন সমস্যা উদ্ভূত হলে দ্রুত ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন। এছাড়া মাথা ভারি লাগার কতিপয় কারণ বিদ্যমান তা নিচে আলোচনা করা হলো :

হঠাৎ দুর্বলতা

খুব হঠাৎই যদি মুখ হাত বা পায়ের মতো শরীরের অন্য অংশ অবশ হয়ে যায় এবং তা কাজ করা বন্ধ করে দেয় তবে বুঝতে হবে তার ব্রেন স্ট্রোক হয়েছে। তাই দ্রুত ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

দৃষ্টিশক্তি কমে আসা

হঠাৎ দৃষ্টি শক্তি ঝাপসা অথবা চোখের সামনে অন্ধকার হয়ে আসা মস্তিষ্ক আক্রমণের লক্ষণ। বিশেষজ্ঞরা আরো মনে করেন, আক্রমণ শুরু চার পাঁচ ঘন্টার মধ্যে চিকিৎসা দেওয়া গেলে রোগীকে অনেক্রাংশেই সুস্থ করা সম্ভব।

ঘন ঘন মাথা ব্যথার কারণ কি

বছরে ২-৪ বার মাথা ব্যাথা হলে তা বড় কোন সমস্যা বলে ধরা যায় না। তবে মাঝে মাঝেই এবং একটানা বহুদিন যাবত মাথাব্যথা হলে অবশ্যই তা চিন্তার কারণ। সেক্ষেত্রে কাল বিলম্ব না করে অতি দ্রুত ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। কেননা এর পেছনে বড় কোন অসুখ থাকতে পারে।

টেনশন

মাথাব্যথার অন্যতম কারণ গুলোর মধ্যে একটি। প্রথমত ঘাড়ের সামান্য উপরে মাথার ঠিক পেছনের নিচের অংশে সর্বপ্রথম ব্যাথার উৎপত্তি হয় এবং ক্রমশ তা মাথার বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে যায়। মাঝে মাঝেই প্রভাব মাথার অগ্রভাগে কপালের অংশে ছড়িয়ে পড়ে।

চোখের সমস্যা

চোখের সমস্যা শুধু চোখেই সীমাবদ্ধ না থেকে তা মস্তিষ্কে প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করে। কার্যত ফলপ্রসু হিসেবে সুনির্দিষ্ট করে বললে মাথার সামনে কপালে ব্যথা অনুভূত হয়। শান্তি বিনোদনের মাধ্যমে এবং আরাম আয়েশের মধ্য দিয়ে এ ব্যথা উপশম হয়।

সাইনাসের সমস্যা

মাথার ভেতরে বায়ুভর্তি স্থানকে সাইনাস বলে। ভাইরাসের সংক্রমিত হলে অনেক সময় ব্যথা অনুভূত হয়। এই সাইনাসের ব্যথা কখনো কখনো মারাত্মক আকার ধারণ করে।

মাইগ্রেনের সমস্যা

মাইগ্রেনের কারণে মাথায় ব্যথা হতে পারে। কখনো ব্যথা মাথা ছাড়িয়ে চোখে চলে আসে।তবে ব্যক্তি ভেবে ব্যথার ভিন্নতাও আছে। তবে বিশেষজ্ঞরা মত দেন যে,মাইগ্রেনের ব্যথার কিছু ট্রিকার ফ্যাক্টর থাকে। যেমন ধরুন-শব্দ, আলো, গন্ধ ইত্যাদি কারণে মাইগ্রেন হতে পারে ।

মাথার তালুতে ব্যথার কারণ

মাথা ব্যথার অন্যতম একটি কারণ হলো দুশ্চিন্তা। সাধারণত চিন্তা থেকেই মাথা ভারী হওয়া এবং বিভিন্ন অংশে ব্যথা অনুভূত হয়। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মাথার তালুতে ব্যথার অন্যতম কারণ হচ্ছে টেনশন। তাই মাথার শীর্ষে অথবা তালুতে ব্যথা হলে সাধারণত বিশ্রাম ও পর্যাপ্ত ঘুমের মাধ্যমে পরিত্রাণ মিলে।

মাথা ব্যথার ওষুধের নাম

মাথা ব্যথা হলে প্রাথমিকভাবে আমরা ঔষধের মাধ্যমে ব্যথা উপশমের চেষ্টা করি। যদি তীব্র মাথাব্যথা হয় এবং তা পুনঃপুন হয় তবে ডাক্তারের পরামর্শে ঔষধ খাওয়া বাঞ্চনীয়। 

তেমনি ডাক্তারের প্রেসক্রাইব কিছু ঔষধের নাম
  1. মিগ্রাটল(Migratol)-200 mg
  2. লজরেইন(Lograin)-200 mg
  3. এনিলিক(Anilic)-200 mg
  4. আরিন(Arain)-200 mg
  5. মিগরেক্স(migrex)-200 mg
  6. মিনোপা(minopa)-200 mg
  7. মাইগান(mygan)-200mg
  8. নামিটল(Namitol)-200mg
  9. টলফি(Tolfi)-200mg
  10. টলমিক(Tolmic)-200mg
  11. টাফনিল(Tufnil)-200mg

মাথা ঘোরা কিসের লক্ষণ

শরীরের ভেতরে শারীরবৃত্তীয় কোনো কারণে রক্ত সঞ্চালনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হলে রক্ত সরবরাহ কমে যায় এবং অক্সিজেনের ঘাটতি লক্ষ্য করা যায়। তাছাড়া হার্টের পেশি সমস্যা টাচি ব্যান্ডি সিনড্রোম বা মাথাঘোরা রোগের উপসর্গ দেখা দেয়। এরকম সমস্যা কবলে পড়লে একজন যোগ্যতা সম্পন্ন ডাক্তার দ্বারা অতিসত্বর চিকিৎসা গ্রহণ করা উচিত।

মাথা ব্যথার কারণ ও প্রতিকার

সকালে ঘুম থেকে ওঠা থেকে শুরু করে সারাদিনের কাজকর্মের মধ্যে এমন কোন ব্যত্যয় আছে ফলে মাথা ব্যথার উদ্ভব হতে পারে। নিচে এমন কতকগুলো উল্লেখ করা হলো যার দ্বারা মাথা ব্যাথা হতে পারে।

মানসিক চাপের পরে রিলাক্স করা

পুরো সপ্তাহ অফিসে ৮-১০ ঘন্টা কাজ করা কক্সবাজারে কাজ করেন এমন পরিবেশে কাজ শেষে নিজেকে বিশ্রামে নিলে দেখা যায় মাথা ব্যথা হয়। এর কারণ হলো মানসিক চাপের সময় স্ট্রেস হরমোন নিঃসরণ হয় আর যখন বিশ্রাম করা হয় তখন মস্তিষ্ক থেকে ট্রান্সমিশন হরমোন নিঃসরণ কমে যায় ফলে 

সংকুচিত এবং প্রসারিত হওয়ার নির্দেশ মস্তিষ্ক পাঠায় এর বিন্যাসহীন আচরণই মাথা ব্যাথার কারণ।প্রতিকার সপ্তাহের শেষে কর্মবিরতির দিনগুলোতে বেশি ঘুমানোর লোভ করবেন না। আধ ঘন্টার বেশি ঘুমালে মাথাব্যথা হয়। সপ্তাহের মাঝের দিনগুলোতে যোগ ব্যায়ামের অভ্যাস করুন।

জমে থাকা রাগ

আপনি যখন হঠাৎ উত্তেজিত হয়ে বেশি রেগে যান তখন আপনার ঘাড়ের রগ খুব টান পড়ে এবং মাথার চতুর্দিকে কি ব্যান্ড পড়ে থাকার মত আবদ্ধতা অনুভূত হয়। রাইট দুশ্চিন্তা জনিত মাথা ব্যাথার অন্যতম কারণ।প্রতিকারএমন মুহূর্তে নিজেকে শান্ত রাখুন। নাক দিয়ে নিঃশ্বাস নিন মুখ দিয়ে ছাড়ুন।

এ আপনার ঘাড়ের মাংসপেশি আস্তে আস্তে ছেড়ে দিবে।এছাড়া অস্বাস্থ্যকর দেহভঙ্গি,সুতীব্র ঝাঁঝালো সুগন্ধি,প্রখর আলো, বিকট শব্দ, খারাপ আবহাওয়া, দাঁতে দাঁত ঘষা ইত্যাকার পরিস্থিতির মাধ্যমে ঘন ঘন মাথা ব্যথা হতে পারে।

লেখকের মন্তব্য

সম্মানিত পাঠক, মানুষের দৈনন্দিন জীবনে চলনে বলনে যে সকল কারণে মাথা ব্যথা হতে পারে তা সম্পর্কে ধারণা দেয়ার চেষ্টা করা হল। আশা করি আলোচনাটি উপকারে আসলে আমাদের সাথে থাকুন। ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আরএম আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়

comment url