কোন কোন খাবার খেলে ভুঁড়ি বাড়ে
মানুষকে সৃষ্টিকর্তা সুন্দর অবয়বে সৃষ্টি করেছেন। মানুষের সৌন্দর্যের ভেতরে তার মুখমন্ডল ও পেটের গুরুত্ব আছে। সুস্বাস্থ্যের পাশাপাশি স্লিম ও স্মার্ট হওয়া জরুরী। কিন্তু স্মার্টনেসের প্রধান প্রতিবন্ধকতা মেদ বা ভু্ঁড়ি। মেদ ভুঁড়ি কমাতে খাদ্য তালিকা ও অভ্যাসের বিকল্প নেই।
ভূমিকা
শরীর সকল সুখের মূল। স্বাস্থ্য যদি ভালো থাকে তবে আপনি সুখী। অতিরিক্ত মেদ মানুষের সার্বিক জীবনযাত্রা ব্যাহত করে। মেদ বা ভুঁড়ি বৃদ্ধির কারণে আপনার সৌন্দর্য এবং খাদ্যে নিষেধাজ্ঞা আরোপ হয়। আপনার অভ্যাস এর এবং খাদ্য গ্রহণের ত্রুটির কারণে শরীরের মেদ বৃদ্ধি পায়। অতিরিক্ত মেদযুক্ত মানুষ অকালে নানা রকম অসুখে নিপতিত হয়।
মেদ ভুঁড়ি কেন হয়
মেদ আপনার চেহারার সৌন্দর্য নষ্ট করে না বরং আপনার চেহারার উপরে বিরূপ প্রভাব ফেলে। বহু ক্ষেত্রে নানান জটিলতার সৃষ্টি করে। নানারকম অসুখে ফেলে। অতিরিক্ত মেদ বৃদ্ধির কারণে ডায়াবেটিকস, হার্ট অ্যাটাক, উচ্চ রক্তচাপ ইত্যাদি বৃদ্ধি পায়। চলুন জেনে নেওয়া যাক তুই কি কারনে ভুঁড়ি হয়।
ট্রান্স ফ্যাট গ্রহণ করা
চর্বি জাতীয় খাদ্য শরীরের জন্য উপকারী। তবে খুব খেয়াল রাখতে হবে কোন ধরনের চর্বি খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করা উচিত। মোটাদাগে আপনার উপর যে খাবার প্রভাব বিস্তার করতে পারে না এ ধরনের চর্বিযুক্ত খাবার ব্যবহার করা উচিত। সাধারণত প্যাকেট জাতীয় খাবারে ট্রান্স ফ্যাট বেশি থাকে। তাছাড়া ট্রান্স ফ্যাট নানা রকম দীর্ঘস্থায়ী জটিলতার সৃষ্টি করে।যেমন কার্ডিওভাসকুলার,ডায়াবেটিস ও ক্যান্সার ইত্যাদি রোগ ট্রান্স ফ্যাট থেকে সৃষ্টি হয়।
অ্যালকোহল ভু্ঁড়ি বাড়ায়
এলকোহলযুক্ত পানীয় শরীরে ভুঁড়ি বৃদ্ধি করে। এ সকল পানীয়তে রয়েছে ক্যালোরি যা শরীরে ওজন ও মেদ বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এ সকল কোমল পানীয় ব্যবহার থেকে দূরে থাকা উচিত।
অলসতাও হতে পারে কারণ
আপনি যদি হারাম প্রিয় হয়ে থাকেন তবে ভুরি কমানো আপনার জন্য কঠিন হয়ে পড়বে। নিয়মিত শরীরচর্চা আপনাকে ফিট রাখে। যারা অহেতুক বেশি বসে থাকেন তাদের মেদ বাড়ার সম্ভাবনা প্রবল।
মানসিক চাপ ও ঘুমের অভাব
অতিরিক্ত মানসিক দুশ্চিন্তা ও ঘুমিয়ে ব্যাঘাত ঘটলে সাধারণত মেদ বাড়তে পারে। গবেষণায় বলা হয়েছে,এ দুই সমস্যার কারণে কর্টিসোল নামের হরমোন নিঃসরন হয় যা বিপাকতন্ত্রে প্রভাব ফেলে। যখনই খাবার হজম কম হয় তখন মেদ বাড়ার সম্ভাবনা থাকে। তাছাড়া ঘুম কম হলে তা আপনার কর্টিসোল স্পাইক করে হলে ওজন ও ভুঁড়ি বাড়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। তাই প্রতিদিন সাত আট ঘন্টা ঘুমানোর অভ্যাস করুন।
কম ফাইবার যুক্ত খাবার খাওয়া
মেদ বাড়ার অন্যতম একটি কারণ কম ফাইবার যুক্ত খাবার খাওয়া। ভুঁড়ি হ্রাস করতে চাইলে উচ্চ ফাইবার যুক্ত খাবার খেতে হবে। কম ফাইবার ও উচ্চ ক্যালোরি যুক্ত খাবার আপনার পেট ভরিয়ে রাখতে সক্ষম হয় না। ফলে আপনি খাবার অতিরিক্ত খান যা আপনার হজম শক্তিকে নষ্ট করে দেয় এর ফলে ভুরি বাড়ার সম্ভাবনা থাকে।
জিনগত সমস্যা
আপনি দেখতে কেমন, শারীরিক সুস্থতা, বংশ পরম্পরা ইত্যাদি বিষয়ে বিবেচনা করে আপনার মেদ বাড়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা উচিত। লেপ্টিন নামক এক ধরনের হরমোন যা ক্ষুধা ও ওজন বাড়ার মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করে। যদি তার শরীরে আধিক্য হয় তবে মেদ বাড়ার সম্ভাবনা থাকে।
মেদ ভুঁড়ি কমানোর উপায়
পেটে অতিরিক্ত মেদ বা চর্বি সবার জন্যই অস্বস্তিকর। এটি আপনার সৌন্দর্য নষ্ট করে এবং খাদ্য ও চলাফেরায় অনেক অবরোধ সৃষ্টি করে। এমনি কতিপয় সমস্যা নিয়ে ভু্ঁড়ি কমানোর কিছু আলোচনা তুলে ধরা হলো। এই অস্বাস্থ্যকর অভ্যাসগুলো এড়ানো গেলে শুধুমাত্র পেটের মেদ নয়, বরং কোমরের মেদ, মুখের চর্বি, উরুর মেদ, নিতম্বের মেদ কমানো সম্ভব।
- নিয়মিত যোগ ব্যায়ামের ব্যবস্থা করুন।
- দ্রুত খাবার খাওয়ার অভ্যাস বাদ দিন।
- খাবারের মাপ সঠিক রাখতে বড় প্লেটের পরিবর্তে ছোট প্লেট বেছে নিন।
- কোন ব্যাপার খাবার বাদ দিবেন না।
- ফাইবার যুক্ত খাবার বেশি খান।
- সহজে হজম হয় তরল কোনো খাবার খান।
- পেট ভর্তি খাবার চেষ্টা করবেন না।
- রাতে খেলে খাবারে ভাত চলবেনা। পারলে সামান্য রুটি আর কিছু ফলমূল খান।
- নিয়মিত ঘুমের অভ্যাস করুন। রাত্রি জাগরণ করবেন না।
- যে সকল খাবার অ্যাসিডিটি হয় তা এড়িয়ে চলুন।
- সাদা চাল, সাদা আটা ব্যতীত অন্য কিছু খান।
- অ্যালকোহলযুক্ত কোমল পানীয় থেকে সদা দূরে থাকুন।
- প্যাকেটজাত খাবার পূর্বেই 'লো ফ্ল্যাট অথবা ফ্যাট ফ্রি' কি না তা যাচাই করে খান।
কোন কোন খাবার খেলে ভুঁড়ি বাড়ে
মিষ্টি বা চিনি মিশ্রিত খাবার বেশি খেলে ভুঁড়ি বাড়ে। কোন ফাইবার যুক্ত খাবার খেলে শরীরের মেদ বাড়ে। প্রোটিন বা আমিষ জাতীয় খাবার না খাওয়া অন্যতম একটি কারণ। ফ্যাটি এসিড বা অত্যধিক চর্বিযুক্ত খাবার খেলে শরীরে মেদ জমা হয়। ডাল, আমন্ড, আখরোট, কাজুবাদাম ইত্যাদি খাবার বেশি করে খেলে অতিরিক্ত মেদ বৃদ্ধির হাত থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।
কোন অভ্যাসের কারণে ভুঁড়ি হয়
মেদ বা শরীরে অতিরিক্ত চর্বি জমা সব মানুষের জন্যই অস্বস্তির কারণ। তাই আমরা কেউ চাইবো না যা আমাদের অভ্যাসগত কারণগুলোর কারণেই আমাদের শরীরে অতিরিক্ত মেদ জমা হোক। বেশিরভাগ গবেষণা অথবা আচরণ বিশ্লেষণ করে পাওয়া যায় যে, সে সকল মানুষের ভেতরেই মেদের আক্রমণ বেশি লক্ষ্য করা যায় যারা অভ্যাস দ্বারা প্রভাবিত।
নিচে সেরকম কিছু বদ অভ্যাস তুলে ধরা হলো
- অত্যধিক আরাম প্রিয়তা।
- কোন ফাইবার যুক্ত খাবার খাওয়া।
- ঘুম কম হওয়া।
- খাবার কম হজম হওয়া.।
- রাত্রে পেট ভর্তি খাওয়া।
- ব্যায়ামের অভ্যেস না করা।
- কোমল পানীয় বেশি পরিমাণে খাওয়া।
- খাবার পরে বেশি বেশি বিশ্রাম করা।
ভুঁড়ি কমানোর ব্যায়াম
ব্যস্ততম এই কর্মমুখী দুনিয়ায় নিজের জন্য একটু সময় বের করা সত্যিই কষ্টকর। তবুও নিজের সুস্বাস্থ্যের কথা ভেবে প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট যোগব্যায়ামে ব্যয় করতে হবে।প্রতিদিন সকালে দৌড়ানোর অভ্যেস আপনাকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করবে।কেবলমাত্র ব্যায়ামের মাধ্যমে স্বল্প সময়ে শরীরের অতিরিক্ত মেদ ঝরানো সম্ভব।পুল,পুশ এই দুই প্রকারের ব্যায়াম মেদ কমাতে দারুণ কার্যকরী।
ভুঁড়ি কমানোর উপায়
প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট যোগব্যায়ামে ব্যয় করতে হবে।প্রতিদিন সকালে দৌড়ানোর অভ্যেস আপনাকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করবে।কেবলমাত্র ব্যায়ামের মাধ্যমে স্বল্প সময়ে শরীরের অতিরিক্ত মেদ ঝরানো সম্ভব।পুল,পুশ এই দুই প্রকারের ব্যায়াম মেদ কমাতে দারুণ কার্যকরী।তাছাড়া নিয়মিত ঘুম,চর্বিযুক্ত খাবার পরিহার,কোমল পানীয় থেকে দূরত্ব,ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া ইত্যাদি কাজকর্মের মাধ্যমে শরীরের ভুঁড়ি কমানো সম্ভব।
লেখকের মন্তব্য
সম্মানিত পাঠক, মেদ বা ভুঁড়ি মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকি। তাই উপরে আলোচনায় যে সকল খাবার গ্রহণ করলে অথবা যে সকল আচরণ আপনার সমস্যাকে আরো বাড়িয়ে তোলে তা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি আলোচনাটি ভালো লেগেছে। যদি আলোচনাটি ভালো লাগে অথবা উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে আমাদের সাথে থাকুন। ধন্যবাদ।
আরএম আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়
comment url