ছেড়ে ছেড়ে জ্বর আসার কারণ

জ্বর মানুষের জীবনে মাঝে মধ্যেই ঘটে এরকম অসুস্থতার ভেতর একটি। বৈরী আবহাওয়া, মৌসুম বদল, ঠান্ডা লাগা ইত্যাদি কারণে জ্বর হতে পারে।
ছেড়ে ছেড়ে জ্বর আসার কারণ

ভূমিকা

জ্বর হলো মানুষের স্বাভাবিক তাপমাত্রা থেকে সামান্য বৃদ্ধি পাওয়া শারীরিক অবস্থা। সাধারণত ৯৮ ডিগ্রি তাপমাত্রা মানব শরীরে স্থিতি অবস্থায় থাকে। আবহাওয়া তারতম্য অথবা কোন বৈরী সমস্যার কারণে মানুষের শরীরে জ্বরের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। প্রিয় পাঠক বন্ধুরা, আজকের আলোচনায় আমরা জানবো কি কি কারনে জ্বর হয় এবং জ্বরের প্রকারভেদ ও করনীয় সম্পর্কে।

বড়দের ঘন ঘন জ্বর হওয়ার কারণ

হঠাৎ করেই ঝরে আক্রান্ত হবার অভিজ্ঞতা আমাদের কম বেশি সকলের রয়েছে। কারো ক্ষেত্রে সেই জ্বর আবার দুই তিন দিন পর্যন্ত স্থায়ী হলে দেখা যায়। এমন অবস্থায় কারোর হাসপাতালে ভর্তি হবারও অভিজ্ঞতা আছে। বাংলাদেশের মানুষের ভেতরে সাধারণত জ্বর হলে প্যারাসিটামল জাতীয় ঔষধ খেয়ে জ্বর ছাড়ানোর প্রবণতা বেশি লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু চিকিৎসকরা বলেছেন,কখনো কখনোই চাওয়ার মারাত্মক পর্যন্ত হতে পারে। তাই কোন জ্বরে কখন ডাক্তারের কাছে যেতে হবে এ সম্পর্কে সচেতন থাকা জরুরী। জ্বর আসলে কোন অসুখ নয়, বরং তা শরীরের অভ্যন্তরে বড় কোন অসুখের ইঙ্গিত। 
যে সকল কারণে ঘন ঘন জ্বর আসতে পারে তা নিচে উল্লেখ করা হলো 
  • ঠান্ডা লাগা
জ্বর হওয়ার অন্যতম কারণগুলোর একটি। আকস্মিক ভাবে প্রচন্ড ঠান্ডা লাগলে জ্বর হবার সম্ভাবনা থাকে।
  • পেটে সংক্রমণ
পাকস্থলী মানুষের খাদ্যশক্তি উৎপাদনের মূল কেন্দ্র। যা পুরো দেহে শক্তি সঞ্চারের কাজ করে। তাই খাদ্যে বিরুপ ক্রিয়া ঘটলে অথবা ফুড পয়জনিং এ আক্রান্ত হলে শরীরে তাপমাত্রা বেড়ে গিয়ে জ্বর হতে পারে।
  • ফুসফুসে সংক্রমণ
ফুসফুসে ভাইরাসজনিত সংক্রমণ হলে শ্বাস-প্রশ্বাসে ব্যাঘাত ঘটে। ফলে রক্তে অস্বস্তিকর ক্রিয়া দেখা দেয়। এতে জ্বর আসে।
  • রক্তস্বল্পতায় জ্বর হয়
শরীরের রক্তের ঘাটতি হলে রক্ত সঞ্চালন সঠিক থাকে না। তখন শরীরকে নিয়ন্ত্রণ না করতে পারায় তাপমাত্রা ব্যাপকভাবে হ্রাস বৃদ্ধি হয়। ফলে জ্বর হয়।
  • ভাইরাসের সংক্রমণ
এছাড়া হঠাৎ আগমনী ভাইরাসের কারণেও জ্বর হতে পারে। যেমন ইনফ্লুয়েঞ্জা ও পক্স জাতীয় ভাইরাস জ্বরের অন্যতম কারণ।
  • মৌসুুম বদল
মাঝে মাঝে আবহাওয়ার বদলে যাওয়া জ্বর আসার অন্যতম কারণ। আবহাওয়ার দোলাচলে শরীরের তাপমাত্রা উঠানামা করে।
  • শরীরে লুকায়িত বড় রোগের বার্তা
শরীরের অভ্যন্তরে যদি বড় কোন অসুখ বাসা বাঁধে তবে মাঝে মাঝে জ্বর আসা স্বাভাবিক । তাই তিন দিনের বেশি জ্বর হলে দেরি না করে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন।

বাচ্চাদের ঘন ঘন জ্বর হলে করণীয়

সাধারণত শিশুরা কোমলমতি ও শরীরের দিক থেকে স্পর্শকাতর এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার দিক দিয়ে অপেক্ষাকৃত দুর্বল। জ্বর শরীরের একটি রোগ প্রতিরোধকারী ব্যবস্থা। শরীর যখন কোন ভাইরাসের বিরুদ্ধে সংক্রমিত হয় তখন প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে যে প্রক্রিয়া গড়ে তোলে তাই জ্বর। তবে সব সময় জ্বরে আক্রান্ত হওয়া ভালো কথা নয়। তাই শিশুর ঘন ঘন জ্বর আসলে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা জরুরী।
চলুন, জেনে নেওয়া যাক কেন ঘন ঘন শিশুদের জ্বর হয়।
  • ম্যালেরিয়া ও টাইফয়েড জ্বর শিশুদের শরীরে ভাইরাস সংক্রমণের মাধ্যমে ঘন ঘন জ্বর সৃষ্টি করে।
  • কান পাকা ও সাইনাস রোগের মাধ্যমে শিশুদের জ্বরে আক্রান্ত হবার ঝুঁকি সর্বোচ্চ। এ দুই অসুখে শিশু ঘনঘন যারা আক্রান্ত হয়।
  • মুত্রতন্ত্রে জন্মগত কোন ত্রুটি হলেই প্রস্রাবের সময় সংক্রমিত হয়ে বারবার জোরে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা থাকে।
  • অল্প ঠান্ডা লেগেও ঘন ঘন জ্বরের কবলে পড়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
  • ঘন ঘন জ্বর আসা শিশুর জ্বর পুরোপুরি সেরে না গেলে অথবা এ অবস্থা চিরতরে মুক্তি না পেলে বড় কোনো অসুখ যেমন ক্যান্সার ও কিডনি সমস্যা রয়েছে কিনা তা জানা জরুরী।।
  • অনেক সময় বারবার জ্বর আসার কোন কারণ লক্ষ্য করা যায় না। অস্বস্তিতে পড়ে অনেক সময় গা ব্যথা করে। এ ব্যাথা থেকে জ্বর হয়।
এরকম অবস্থায় শিশুকে পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশ্রামের ব্যবস্থা করে দিতে হবে। প্রচুর পরিমাণে তরল খাবার খাওয়ান। খাবার স্যালাইন ঘনঘন খাওয়া। হালকা গরম যেমন সয় সেরকম পানিতে গোসল করান। পাতলা কাপড় পরান।

ঘন ঘন জ্বর কোন রোগের লক্ষণ

ঘন ঘন জ্বর আসাটা স্বাভাবিক নয়। যেহেতু বিশেষজ্ঞরা বলেন, জ্বর কোন অসুস্থতা নয় বরং তা শরীরের সংক্রমিত ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ। তবে জ্বরকে বলা হয় শরীর অভ্যন্তরে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত অথবা লুকায়িত কোন বড় রোগের বার্তা। ঘন ঘন জ্বর আসলে নিজেকে সচেতন রাখতে হবে। পাকস্থলী সমস্যা,লিউকোমিয়া, এমনকি ক্যান্সারের ফলে ঘন ঘন জ্বর আসতে পারে।

যেহেতু জ্বর বড় অসুখের লক্ষণ বা প্রকাশ। তাই ঘন জ্বর আসলে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন। টিকা নিলে, ফোঁড়া বা টিউমার হলে, রিউমাটয়েড আথ্রাইটিস, প্রস্রাবের রাস্তায় ইনফেকশন হলে, পিরিয়ডের কারণে, আকস্মিক ভয় পেলে বা মানসিক আঘাত পেলেও ঘন ঘন জ্বর হতে পারে।

ছেড়ে ছেড়ে জ্বর আসার কারণ

ছেড়ে ছেড়ে জ্বর আসার মূল কারণ হলো কিছু মারাত্মক অসুখ। যক্ষ্মা, লিম্ফোমা, কালাজ্বর, ম্যালেরিয়া, এইচআইভি ইনফেকশন, শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ফোঁড়া (যেমন—ফুসফুসে ফোঁড়া, লিভারে ফোঁড়া), কানেকটিভ টিস্যু রোগ (যেমন—রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, এসএলই), থাইরয়েড রোগ (যেমন—হাইপারথাইরয়জ্ঞিম), ফুসফুস, লিভার ও কিডনি ক্যানসারেও অল্প অল্প জ্বর থাকে।

চোরা জ্বরের লক্ষণ

কালা জ্বরকে চোরা জ্বর বলা হয়। যাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানে (Visceral leishmaniasis), Sahib's disease, Dumdum fever, Black fever বলে আখ্যায়িত করে। পরজীবী আক্রমণের ফলে রোগটি সংঘটিত হয়। চোরা জ্বর হলে যেসব লক্ষণ দেখা যায় সেগুলো হলঃ ১.শারীরিক দুর্বলতা,২. ক্ষুধা মন্দা ভাব হওয়া, ৩.বার বার জ্বর আসা, ৪.রক্ত শূন্যতা দেখা দেয়া, ৫.লসিকা গ্রন্থি ফুলে যাওয়া, ৬.যকৃত ও প্লীহা ফুলে যাওয়া।

লেখকের মন্তব্য

সম্মানিত পাঠকবৃন্দ, আলোচনাটিতে জ্বর আসার কারণ, প্রতিকার ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি আলোচনাটি আপনাদের উপকারে আসবে। পাশে থাকুন, ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আরএম আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়

comment url