সিদ্ধ আলু খেলে কি মোটা হওয়া যায়

আলু একটি শ্বেতসার সমৃদ্ধ কন্দ। যা আমেরিকার প্রধান সবজি হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। আলুর বৈজ্ঞানিক নাম solanum tuberosum। আলুর প্রধান পুষ্টিগুণ হলো শর্করা।
সিদ্ধ আলু খেলে কি মোটা হওয়া যায়

ভূমিকা

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সবজি হিসেবে বহুল ব্যবহৃত হয় আলু। সার্বজনীন সবজি হিসেবে যার খ্যাতি রয়েছে। পৃথিবীর প্রত্যেকটা দেশেই প্রত্যেক জনপদে আলুর ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়।জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি গবেষণা সংস্থা (FAO) সর্বশেষ উৎপাদন গবেষণা জরিপ অনুযায়ী, আলু উৎপাদনে শীর্ষ দেশ চায়না। ৯ কোটি ৪৩ লাখ টন আলু উৎপাদিত হয় দেশটিতে।

৫ কোটি ৪২ লাখ ৩০ হাজার টন আলু উৎপাদনে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ভারত। এছাড়া তৃতীয় অবস্থানে থাকা ইউক্রেন উৎপাদন করে ২ কোটি ১৩ লাখ ৫৬ হাজার ৩২০ টন।এই তিনটি দেশে উৎপাদিত আলু তাদের চাহিদা পূরণের পর পুরো বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে।

আলু খেলে কি ক্ষতি হয়

আলু খেলে যে ক্ষতি হয় কথাটি পুরোপুরি সত্য নয়। প্রত্যেকটি সবজির মতোই আলুরও রয়েছে ভালো-মন্দ দুটো দিক। আলু খেলে যে শরীরের ক্ষতি হয় সব সময় এমন ধারণা অমূলক। তবে আলু খাবার পদ্ধতিটা বোঝা উচিত। রান্না করা আলুতে পুষ্টিগুণ বেশি থাকে।এছাড়া স্নাক্স বা ফ্রেন্স ফ্রাই আলুতে ক্ষতির সম্ভাবনা বেশি।স্থুলকায় চেহারা না হলে কিংবা ডায়াবেটিস রোগ না থাকলে ডায়েটে আলু রাখা জরুরী।

বিরিয়ানি, মাংস কষা, মাছের ঝোল, সবজি কিংবা যেকোনো নিরামিষ তরকারিতে আলু ছাড়া মন ভরতে চায় না। ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ এগুলো সমস্যা যাদের রয়েছে তারা আলু এড়িয়ে চলুন। আরো খাওয়া শরীরের পক্ষে ভালো কি মন্দ এ বিষয়ে দুটি মত রয়েছে। তবে পুষ্টিবিদেরা জানাচ্ছে, আলু মানেই যে সব সময় শরীরের পক্ষে খারাপ তা নয়।অনেক উপকারও আছে। ডায়াবেটিস কিংবা ওবিসিটির সমস্যা থাকলে কোন আলো খাওয়ার পরামর্শ দেন পুষ্টিবিদরা। তবে সব সমস্যা না থাকলেই ডায়েটে আলু রাখা ভালো।

আলু খেলে কি মোটা হয়

আলু ছাড়া বাঙালির হেঁশেল অচল।নিত্যদিন রান্নায় আলুর নানান পদ খাদ্য রসিক বাঙালির স্বাদের চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ। যে কোন রকম তরকারিতে আলুর ব্যবহার মানেই স্বাদের মাত্রা দ্বিগুন। সাথে পুষ্টিগুণ বাড়ে বহুগুণে।তবে এতসব উপকারের মাঝে আলুর নামে বদনাম রয়েছে। বলা হয়ে থাকে ওজন বৃদ্ধিতে আলু খলনায়কের ভূমিকা রাখে।আলু খেলে কি ওজন বাড়ে এমন বিভ্রান্তিকর প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন ভারতীয় পুষ্টিবিদ আকাঙ্ক্ষা জে সারদা।

তিনি বলেন, নিয়মিত ব্যায়ামের পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর ডায়েট এমনিতেই ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। স্থূলাকার চেহারা কিংবা বহুমূত্র অথবা উচ্চ রক্তচাপ জনিত সমস্যা না থাকলে আলু একটি উপকারী সবজি হিসেবে শরীরের নিয়ন্ত্রণ ও বিকাশ ঘটায়। এ পুষ্টিবিদের সতর্কতা হলো, থেকে তৈরি বিভিন্ন ফাস্টফুড খেলে ক্ষতির সম্ভাবনা প্রবল। তবে সাদা আলু ও রাঙা আলু ওজন কমাতে দারুন সহায়ক বলে তিনি মত দেন। 

তিনি আরো ব্যাখ্যা করেন আলুতে ভিটামিন সি থাকায় শরীরে ওজন নিয়ন্ত্রণে কার্যকরী। তাছাড়া আলুতে প্রচুর কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট থাকায় তার শরীরের ক্যালরি ধীরে ধীরে ক্ষয় করতে থাকে। তাই মোটা হবার ক্ষেত্রে এর বিশেষ দায় লক্ষ্য করা যায় না। আলুতে পটাশিয়ামের উপস্থিতি থাকায় পেশি গঠনে দারুন ভূমিকা রাখে। এছাড়া আলুতে প্রচুর ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ বিদ্যমান থাকায় ওজন কমাতে সাহায্য করে।ফাস্টফুট ছাড়া তাই পরিমিত আলু শরীরে ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

সিদ্ধ আলু খেলে কি মোটা হওয়া যায় 

ইউনাইটেড স্টেটস ডিপার্টমেন্ট অব এগ্রিকালচারের রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রতি ১০০ গ্রাম আলুতে রয়েছে ৭৭ গ্রাম ক্যালরি,২ গ্রাম প্রোটিন ও ২ গ্রাম ফাইবার। এছাড়া আলুতে রয়েছে ভিটামিন ও খনিজ। উপরোক্ত পদার্থ ওজন কমাতে সহায়ক। তাছাড়া ব্যায়াম ও স্বাস্থ্যকর ডায়েট শরীরের ওজন কমাতে অগ্রণী ভূমিকা রাখে। নির্দিষ্ট কিছু অসুখ বালাই যেমন বহুমূত্র, স্থূলকায়,উচ্চ রক্তচাপ ইত্যাদি না থাকলে আরো একটি আদর্শিক খাবার হতে পারে।

 যাতে মোটা হবার সম্ভাবনা একেবারই সীমিত। আলু শরীরে মেটাবলিজম রেট বাড়িয়ে এবং শরীরের চর্বি হ্রাসের পাশাপাশি আরো অন্যান্য উপায়ে মেদ কমায় এবং স্বাস্থ্যের উপকার করে। উল্লেখ্য যে, সেদ্ধ আলুতে মিষ্টি আলুর সমপরিমাণ ক্যালরি থাকে যা দ্রুত ওজন কমাতে কার্যকরী। কেবলমাত্র আলুকে ফাস্টফুড উপায় গ্রহণ করা ছাড়া সর্বোপরি আলু ওজন কমাতে দারুন উপকারি একটি সবজি।

আলু খেলে কি সুগার হয়

Diabetes বা মধুমেহ রোগীর সুগার বেড়ে যাওয়ার ভয় থাকে। তারা শঙ্কিত হন যে, আমরা কি ধরনের ডায়েট নেব। আলু খেলে সুগার বেড়ে যাবে কিনা? -এ ভয় তাদের সহসায় তাড়া করে ফেরে। তবে পুষ্টিবিদ ও ডায়েটিশিয়ানদের কল্যাণে একটি চাঞ্চল্যকর তথ্য আমাদের সামনে এসেছে। তিনারা জানান,হজমের জন্য সবজির মধ্যে আলু সবচেয়ে ভালো। 

মার্কিন গবেষণা সংস্থা স্টেটস ডিপার্টমেন্ট অফ এগ্রিকালচারের রিপোর্ট বলছে যদি ১০০ গ্রাম আলুতে রয়েছে ৭৭ গ্রাম ক্যালরি, দুই গ্রাম ফাইবার ও ২ গ্রাম প্রোটিন। এছাড়া মেটাবলিক রেট বাড়িয়ে সুগার নিয়ন্ত্রণ করে। গরম ভাতে সেদ্ধ আলু খাওয়া একদমই উচিত নয়। গবেষকরা জানাচ্ছেন, আলুতে রয়েছে গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণকারী উপাদান যা শরীরে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। ফ্যাটি অ্যাসিড চেইন কোলোনের মাধ্যমে এনার্জি সোর্স হিসেবে কাজ করে এ উপাদান।

 সহজে হজম যোগ্য এমন কার্বোহাইড্রেট থেকে রেজিস্টেন্ট স্টার্চ খেলে শরীরে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থেকে যায়। তাই আলু খেলে সুগার বেড়ে যাওয়া কথাটি সত্য নয়। তবে ফাস্টফুড ও অস্বাস্থ্যকর ডায়েট অবশ্যই শেষ হকের দিকে ঠেলে দেয়।

আলু কি সবজি

আলু একটি গণতান্ত্রিক সবজি। সব রকম খাবারের সাথে আলু মিশিয়ে সহজেই বিভিন্ন পদ রান্না করা সম্ভব। আলু আমেরিকার একটি মূল সবজি।

সিদ্ধ আলু খাওয়ার উপকারিতা

আলু শর্করা জাতীয় একটি খাবার। আলুতে ভিটামিন, পটাশিয়াম, খনিজ ও ফাইবার আছে। সহজে হজম হয় বলে পাকস্থলীতে অতিরিক্ত কোষ তৈরি হতে দেয় না। যা সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। শুধু তাই নয় সেতো আলু শরীরের উপকার করে। চলুন, কি কি উপকার করে দেখা যাক-

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে
আলুতে উপস্থিত ফাইবার শরীরে প্রবেশের পর উল্লেখযোগ্য হারে রক্তচাপ কমে আসে। সেসাথে শরীর খারাপ করলে মাত্রা কমে ফেলে। হলে হার্টের কোন ক্ষতি না করেই কত চাপ সুশৃংখল হয়।

ব্রেন পাওয়ার বৃদ্ধি পায়
আলুতে বিদ্যমান নানারকম উপাদানের সমন্বয় মস্তিষ্কে স্ফূর্তি দান করে। ফলে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়।
এছাড়া ফাইবারের চাহিদা, ভিটামিন সি এর যোগান, পটাশিয়ামের ঘাটতি দূর, ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়, দেহের ভেতরে প্রদাহের মাত্রা কমবে,ক্যান্সারের মত রোগ দূরে পালাবে ইত্যাদি উপকার মিলবে সেদ্ধ আলু খেলে।

লেখক এর মন্তব্য

সম্মানিত পাঠক এর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, আলু একটি সর্বজনীন ও গণতান্ত্রিক সবজি। বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই উৎপাদন হয় এবং তরকারিতে ব্যবহার করা যায়। উপরে আলোচিত আলোচনাটি আপনার ভালো লেগে থাকলে আমাদের সাথে থাকুন। ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আরএম আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়

comment url