বারোমাসি লাউ চাষ পদ্ধতি/হাইব্রিড লাউ চাষ পদ্ধতি

শীতকালীন সবজি হিসেবে বাংলাদেশে চাষ করা অন্যতম একটি সবজি হলো লাউ।ধ্বনি পরিবর্তিত একটি শব্দ হলো লাউ যার মূল শব্দ 'অলাবু'।হজমের পক্ষে সহায়ক এবং সুস্বাদু এ সবজির চাষে তেমন কোন খরচ না হওয়ায় ব্যাপকভাবে চাষ করা হয়। লাউ সহ গাছ, পাতা, বাকল সবটাই তরকারি হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
বারোমাসি লাউ চাষ পদ্ধতিহাইব্রিড লাউ চাষ পদ্ধতি


ভূমিকা

লাউ বা কদু বাংলাদেশে উৎপন্ন সবজি গুলোর মধ্যে একটি। সাধারণত শীতকালে ব্যাপকভাবে উৎপাদনের জন্য মূলত একে শীতকালীন সবজি বলা হয়। লাউ যার বৈজ্ঞানিক নাম Lagenaria siceraria।লাউয়ের আদি উৎস আফ্রিকা। লাউ এক প্রকার লতানো উদ্ভিদ। কাঁচা অবস্থায় যা তরকারি হিসেবে ব্যবহার করা হয়। 

আর পরিপক্ক হলে তা বোতল, টব,সৌখিন আসবাব হিসেবে ব্যবহার করা হয়। তাই ইংরেজি নাম Bottle gourd।কাঁচা অবস্থায় লাউয়ের ভেতরটা সাদা শাঁশ ও বাইরের দিকটা সবুজ রঙের হয়ে থাকে। আঞ্চলিক বিভিন্নতায় একে লাউ ও কুদু উভয় নামে ডাকা হয়।

লাউ গাছের ফলন বৃদ্ধি

হজম ও পুষ্টি গুণের কারণে লাউয়ের ব্যাপক খ্যাতি রয়েছে। সুষ্ঠ তদারকি আর নিরবিচ্ছিন্ন যত্নের মাধ্যমে লাউ গাছের ফলন বৃদ্ধি করা সম্ভব। রোপনের পূর্বে বীজতলা নির্বাচনের সময় জৈব সার বা গোবর অধিক পরিমাণে সরবরাহ করা উচিত। রোপনের ১৫ থেকে ২০ দিন পর গাছ একটু বেড়ে উঠলে রাসায়নিক সার প্রয়োগে বৃদ্ধি নিশ্চিত করতে হবে।

তবে খেয়াল রাখতে হবে লাউয়ের পাতায় যেন কোন পোকা অথবা ডগায় ছত্রাকের আক্রমণ না হয়। সেজন্য ছত্রাক নাশক ও পোকা দমন করতে হবে। পর্যাপ্ত সূর্যের আলোর ব্যবস্থা করতে হবে। সেচ দিয়ে মাটি ভেজা রাখতে হবে। আপনার উদ্দেশ্য যদি হয় লাউ গাছের বৃদ্ধি তবে ফল আসলে দ্রুত ফল কর্তন করে ফেলুন। লাউয়ের পাতা ও ডগা বৃদ্ধিতে ভিটামিন প্রয়োগ করুন।

লাউ গাছের কীটনাশক

লাউ গাছ অতি সংবেদনশীল এবং ক্ষণকালীন একটি উদ্ভিদ। এর যত্নে মাকর দমনের বিকল্প নেই।
চল জেনে নেওয়া যাক লাউ গাছের বিভিন্ন কীটনাশকের নাম
  • রেড পামকিন বা লাল বিটল পোকা দমনে সাইপারমেথ্রিন জাতীয় ওষুধ প্রতি ১০ লিটার পানিতে পাঁচ শতক জায়গায় দিনে ২-৩ বার স্প্রে করুন। প্রত্যেক ১০-১২ দিন অন্তর অন্তর স্প্রে চালু রাখুন।
  • জাব পোকা দমনে ইমিডাক্লোরোপিড জাতীয় ওষুধ প্রতি ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে পাঁচ শতক জমিতে দশ দিন পর পর স্প্রে করতে হবে। দিনে ২-৩ বার । স্প্রে করার সময় ও ফসলের উন্নতি দুটো মাথায় রেখে প্রয়োজনে ১০ দিনের জায়গায় ৭ দিন পর পর স্প্রে করুন।
  • ফলের মাছি পোকা দমনে সাইপারমেথ্রিন জাতীয় কীটনাশক দশ লিটার পানিতে মিশিয়ে পাঁচ শতক জমিতে ১০-১২ দিন অন্তর অন্তর স্প্রে করুন। এটিও দিনে ২-৩ বার স্প্রে করুন। উত্তম ফলাফল পেতে স্প্রে থেকে স্প্রে ব্যবধান কমিয়ে দিতে পারেন।
  • পাউডারী মিল্ডিউ রোগে সালফার জাতীয় ওষুধ এবং এ্যানথ্রাকনোজ ফল পঁচা জাতীয় রোগ দমনে কার্বেন্ডাজিম জাতীয় কীটনাশক প্রতি ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে পাঁচ শতক জমিতে দশ দিন পর পর দিনে দুইবার স্প্রে করুন।

হাইব্রিড লাউ চাষ পদ্ধতি

উচ্চ ফলনের জন্য হাইব্রিড জাতের লাউ সুপারিশকৃত ও প্রশংসিত। উৎপাদনের পরিমাণ, পুষ্টিগুণ, আবহাওয়া উপযোগিতা অর্জন করায় হাইব্রিড লাউ চাষে ঝুঁকেছে চাষিরা। পণ্যের মান ও চাহিদার প্রশ্নে ক্রেতার আগ্রহ থাকায় হাইব্রিড লাউ চাষ পদ্ধতি জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। লাউ চাষে আবহাওয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। শীতকালে তাপমাত্রা দশ ডিগ্রি নিচে নেমে গেলে লাউ চাষের জন্য অসম্ভব হয়ে যায়। সময়কাল
সাধারণত শীতকালে আগস্ট থেকে নভেম্বর এবং গ্রীষ্মকালে ফেব্রুয়ারি থেকে মে লাউ চাষের উপযুক্ত মৌসুম। তবে সারা বছরই কমবেশি লাউ চাষ করা যায়।
অঙ্কুরোদগম
চারা রোপনের ২৪ ঘন্টা আগে থেকেই পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হয়। তবে বিচির চারা গঁজানোর ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
পানিসেচ
লাউ সংবেদনশীল এবং স্বল্পমেয়াদী শস্য। তাই এর বীজতলা পানিযুক্ত রাখা উচিত।
মাদা তৈরি 
মাদা বা দরার ব্যাস ৫০-৫৫ সে.মি,গভীরতা ৫০ থেকে ৫৫ সেমি, এবং তলদেশের গভীরতা ৪০ থেকে ৪৫ সেন্টিমিটার করা প্রয়োজন। প্রতি সারির দূরত্ব হবে ২ মিটার, বীজ থেকে বীজের দূরত্ব ২ মিটার। ৩ সেমি গভীরে ২-৩ টি বীজ রোপন করতে হবে। সাত আট দিন পর সুস্থ চারাটি রেখে বাকিগুলো উপড়ে ফেলতে হবে।
এছাড়া সেচ, মালচিং, নিড়ানি, সার প্রয়োগ, কীটনাশক ও যত্ন সঠিকভাবে করলে উচ্চ ফলন পাওয়া যায়।

লাউ গাছের রোগ ও প্রতিকার

সাধারণত লাউ গাছের যেসকল রোগ দেখা দেয় তার তালিকা ও প্রতিকার।

লাউয়ের গ্রে মোল্ড রোগ

প্রতিকার- ছত্রাক নাশক কপার অক্সিক্লোরাইট জাতীয় কীটনাশক -কুপ্রাইট প্লাস ৭ গ্রাম প্রতি লিটার পানিতে মিশে স্প্রে করুন। আগাম বীজ বপন করুন। সুষম সার ব্যবহার করুন।

লিফকার্ল রোগ

প্রতিকার- আক্রান্ত গাছ ধ্বংস করুন। ভালো বীজ রোপন করুন। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন বীজ ব্যবহার করুন।

স্ট্যাক রোগ

প্রতিকার-জমিতে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখা। রিডোমিল গোল্ড প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম কীটনাশক মিশিয়ে স্প্রে করুন। আক্রান্ত গাছ থেকে বীজ সংগ্রহ না করা। একই জমিতে বারবার লাভ না চাষ করা।

বারোমাসি লাউ চাষ পদ্ধতি

উচ্চ ফলনের জন্য হাইব্রিড জাতের লাউ সুপারিশকৃত ও প্রশংসিত। উৎপাদনের পরিমাণ, পুষ্টিগুণ, আবহাওয়া উপযোগিতা অর্জন করায় হাইব্রিড লাউ চাষে ঝুঁকেছে চাষিরা। পণ্যের মান ও চাহিদার প্রশ্নে ক্রেতার আগ্রহ থাকায় হাইব্রিড লাউ চাষ পদ্ধতি জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। লাউ চাষে আবহাওয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। শীতকালে তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি নিচে নেমে গেলে লাউ চাষের জন্য অসম্ভব হয়ে যায়। তবে দিনের বেলা ২৫ থেকে ২৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস লাউয়ের জন্য সবচেয়ে ভালো আবহাওয়া।
  • সময়কাল সাধারণত শীতকালে আগস্ট থেকে নভেম্বর এবং গ্রীষ্মকালে ফেব্রুয়ারি থেকে মে লাউ চাষের উপযুক্ত মৌসুম। তবে সারা বছরই কমবেশি লাউ চাষ করা যায়।
  • অঙ্কুরোদগম চারা রোপনের ২৪ ঘন্টা আগে থেকেই পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হয়। তবে বিচির চারা গঁজানোর ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
  • পানিসেচ লাউ সংবেদনশীল এবং স্বল্পমেয়াদী শস্য। তাই এর বীজতলা পানিযুক্ত রাখা উচিত।
  • মাদা তৈরি মাদা বা দরার ব্যাস ৫০-৫৫ সে.মি,গভীরতা ৫০ থেকে ৫৫ সেমি, এবং তলদেশের গভীরতা ৪০ থেকে ৪৫ সেন্টিমিটার করা প্রয়োজন। প্রতি সারির দূরত্ব হবে ২ মিটার, বীজ থেকে বীজের দূরত্ব ২ মিটার। ৩ সেমি গভীরে ২-৩ টি বীজ রোপন করতে হবে। সাত আট দিন পর সুস্থ চারাটি রেখে বাকিগুলো উপড়ে ফেলতে হবে।
এছাড়া সেচ, মালচিং, নিড়ানি, সার প্রয়োগ, কীটনাশক ও যত্ন সঠিকভাবে করলে উচ্চ ফলন পাওয়া যায়।

গ্রীষ্মকালীন লাউ চাষ

গ্রীষ্মকাল একটি খরা মৌসুম। গ্রীষ্মকালীন লাউ চাষে মাটি নির্বাচন করতে হবে তুলনামূলকভাবে উর্বর। পর্যাপ্ত সেচের ব্যবস্থা রাখতে হবে। ভালো মানের বীজ সংগ্রহ করতে হবে।

শীতকালীন লাউ চাষ

শীতকালে তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি নিচে নেমে গেলে লাউ চাষের জন্য অসম্ভব হয়ে যায়। তবে দিনের বেলা ২৫ থেকে ২৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস লাউয়ের জন্য সবচেয়ে ভালো আবহাওয়া।
  • সময়কাল সাধারণত শীতকালে আগস্ট থেকে নভেম্বর এবং গ্রীষ্মকালে ফেব্রুয়ারি থেকে মে লাউ চাষের উপযুক্ত মৌসুম। তবে সারা বছরই কমবেশি লাউ চাষ করা যায়।
  • অঙ্কুরোদগম চারা রোপনের ২৪ ঘন্টা আগে থেকেই পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হয়। তবে বিচির চারা গঁজানোর ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
  • পানিসেচ লাউ সংবেদনশীল এবং স্বল্পমেয়াদী শস্য। তাই এর বীজতলা পানিযুক্ত রাখা উচিত।
  • মাদা তৈরি মাদা বা দরার ব্যাস ৫০-৫৫ সে.মি,গভীরতা ৫০ থেকে ৫৫ সেমি, এবং তলদেশের গভীরতা ৪০ থেকে ৪৫ সেন্টিমিটার করা প্রয়োজন। প্রতি সারির দূরত্ব হবে ২ মিটার, বীজ থেকে বীজের দূরত্ব ২ মিটার। ৩ সেমি গভীরে ২-৩ টি বীজ রোপন করতে হবে। সাত আট দিন পর সুস্থ চারাটি রেখে বাকিগুলো উপড়ে ফেলতে হবে।
  • এছাড়া সেচ, মালচিং, নিড়ানি, সার প্রয়োগ, কীটনাশক ও যত্ন সঠিকভাবে করলে উচ্চ ফলন পাওয়া যায়।

হাজারী লাউ চাষ পদ্ধতি

হাজারী লাউ বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী একটি লাউ।অঙ্কুরোদগম চারা রোপনের ২৪ ঘন্টা আগে থেকেই পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হয়। তবে বিচির চারা গঁজানোর ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।পানিসেচ লাউ সংবেদনশীল এবং স্বল্পমেয়াদী শস্য। তাই এর বীজতলা পানিযুক্ত রাখা উচিত মাদা তৈরি মাদা বা দরার ব্যাস ৫০-৫৫ সে.মি,গভীরতা ৫০ থেকে ৫৫ সেমি, এবং তলদেশের গভীরতা ৪০ থেকে ৪৫ সেন্টিমিটার করা প্রয়োজন।

প্রতি সারির দূরত্ব হবে ২ মিটার, বীজ থেকে বীজের দূরত্ব ২ মিটার। ৩ সেমি গভীরে ২-৩ টি বীজ রোপন করতে হবে। সাত আট দিন পর সুস্থ চারাটি রেখে বাকিগুলো উপড়ে ফেলতে হবে।এছাড়া সেচ, মালচিং, নিড়ানি, সার প্রয়োগ, কীটনাশক ও যত্ন সঠিকভাবে করলে উচ্চ ফলন পাওয়া যায়।

লেখকের মন্তব্য

সম্মানিত পাঠক, বাংলাদেশের লাউ চাষ, লাউ এর উপকারিতা, রোপন পদ্ধতি ও সম্ভাবনার নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি ব্লগটি আপনাদের উপকারে আসবে। লেখাটি ভালো লাগলে পাশে থাকবেন। ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আরএম আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়

comment url