চা উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান

চা একটি সুস্বাদু পানীয়।ভিটামিনের গুণে সমৃদ্ধ চা পান করলে নানা রকম উপকার মিলে। ভিটামিনের অভাবে মুখে ঘা,ত্বকের উজ্জ্বলতা,হার্টের সুস্থতা বৃদ্ধিতে চা দারুন সহায়ক।
চা উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান

ভূমিকা

চা একটি সুস্বাদু পানীয়। যা মূলত চা পাতা থেকে গরম পানিতে ফুটিয়ে প্রস্তুত করা হয়। চা এর বৈজ্ঞানিক নাম Camellia Sinensis।চা পাতা,মূল,শাখা ইত্যাদির কৃষিজাত একটি পণ্য। বেশি চা উৎপাদনে শেষে রয়েছে চীন। গ্রীক দেবতা থিয়েরার নাম অনুসারে চা এর নামকরণ করা হয়। যার ইংরেজি প্রতিশব্দ দ্বারায় tea।চা অনেক রকম হতে পারে লাল চা, কালো ছাড়া, সবুজ চা, সাদা চা,পুয়েরা,প্যারাগুয়ে চা ইত্যাদি। সব চাইয়ে ক্যামেলিয়া সিরেন্সিস থাকেনা। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই চা প্রস্তুতে এ উপাদানটি পাওয়া যায়।

চা উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান

উৎপাদনের নিরিখে ১০ পণ্যের ভিতরে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে প্রধান শস্য হিসেবে উৎপাদিত বেশিরভাগ ফসলই ১০ এর ভেতরে। চা উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান চতুর্থ।আবহাওয়া জলবায়ুগত কারণে বাংলাদেশের ভূপ্রকৃতি চা চাষের জন্য অনুপযোগী। তবে দেশের উত্তর পূর্বাঞ্চল ও পূর্ব দক্ষিণ অঞ্চল পর্বত বেষ্টিত হওয়ায় সেখানে চা বাগান গড়ে উঠেছে। দেশের উত্তরাংশের জেলা পঞ্চগড়ে চা চাষ হয়। উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় বিভাগ সিলেটের হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজারে ব্যাপক চা চাষ হয়। তাছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রামে চায়ের ব্যাপক চাষাবাদ হয়।

চা এর উপকারিতা ও অপকারিতা

ক্লান্তি দূর করতে চা এর বিকল্প নেই। যখন আপনি ক্লান্ত পরিশ্রান্ত হন তখন এক কাপ চা আপনার কর্মউদ্যমকে পুনরায় ফিরিয়ে আনে। চায়ের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে আমরা অনেকেই অবগত নয়। আজকাল বিজ্ঞানীরা বলেন, চা ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক। তবে এরকম কোন সুনির্দিষ্ট তথ্য এখনো পাওয়া যায় না। তবে এটি প্রমাণিত যে চায়ের কিছু উপাদান প্রাণী কোষের ডিএনএ মেরামতের কাজ করে। যার ফলে ক্যান্সারের প্রবণতা বা ঝুঁকি অনেকাংশে কমে আসে। 

স্বাস্থ্য রক্ষা চাইতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যদি এ পুষ্টিগুণ সামান্য হয় তথাপি কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপাদান থাকায় তা সেবন স্বাস্থ্যের পক্ষে উপকারী। চায়ের অভ্যন্তরে রয়েছে পলিফেনলস,ফ্ল্যাভোনয়েডস ও ক্যাটেচিন।চায়ে ২৫ শতাংশ পলিফেনালস বিদ্যমান যা উচ্চ রক্তচাপ প্রতিরোধ করে।
চা এর উপকারিতা নিচে তুলে ধরা হলো
  • ফিগার ঠিক রাখতে গ্রীণ টীর ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়।
  • একটি জাপানী গবেষণায় দেখানো হয়েছে যে,যারা প্রতিদিন ২ কাপের বেশি সবুজ চা পান করেন তারা মানসিকভাবে তুলনামূলকভাবে বেশি শক্তিশালী।
  • রোজ রোজ সবুজ চা সেবনে ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেক কমে আসে।
  • সবুজ চায়ে ভিটামিন এ,সি,ই ও ক্যালসিয়াম,ম্যাগনেসিয়ামসহ নানা খনিজ উপাদান যা মানব শরীরের জন্য অনেক উপকারী।
  • কিডনি রোগ নিরাময়ে চা একটি ভালো ওষুধ।
  • পোকামাকড় কামড়ালে ক্ষতস্থানে সবুজ চায়ের পাতা বেটে লাগালে ব্যথা থেকে আরাম মিলে।
  • রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়।।
  • ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে অনেক সাহায্য করে।
  • চা খাবার থেকে আয়রন শোষণ করে। কারণ চা বা কফিতে রয়েছে পলিফেনন জেস্টানিন নামক উপাদান যা আয়রন শোষণ করে বা জেস্টানিনরে সঙ্গে আয়রন মিশে শরীর থেকে বের হয়ে যায়।
  • চা শরীরে থায়ামিন বা ভিটামিন বি শোষণ রোধ করে যা বেরিবেরি রোগের অন্যতম কারণ।
  •  চা খাবার থেকে আমিষ ও ভিটামিন শোষণ করে এবং শরীর এই খাবারগুলোকে হজম করতে পারে না।

চুলের যত্নে চা পাতার ব্যবহার

তার মধ্যে প্রাথমিক জীবনে সুস্থ ডায়েটের একটি অংশ। সকালবেলা এক কাপ চা সারা দিনের কর্মশক্তিকে বাড়িয়ে তোলে। তবে তা শরীরের পক্ষে যেমন উপকারী তেমনি চা ও এর পাতার ব্যবহার আপনার চুলের জন্য দারুন ওষুধের কাজ হতে পারে। চায় রয়েছে ভিটামিন ই, সি ও প্যানথেল।চুল ভেঙ্গে পড়া, চুলের বৃদ্ধি, উজ্জ্বলতা নষ্ট হয়ে যাওয়া ইত্যাদি সমস্যায় চা পাতা কিংবা লিকার ব্যবহার করে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। চলুন জেনে নেওয়া যাক চুলের যত্নে কখন কিভাবে চা পাতার ব্যবহার করা যায়।

নিষ্প্রাণ চুলের যত্নে

দিনে দিনে চুল ভেঙে পড়া, চুলের উজ্জ্বলতা নষ্ট হয়ে যাওয়া এ দুই সমস্যায় চা পাতার লিকার ব্যবহার করুন। চুলের সাথে লিকার মিশিয়ে নিন এভাবে ১০ মিনিট রাখুন তারপর ভালোভাবে শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন।

চুলের উজ্জ্বলতায়

চুলের উজ্জ্বলতা নষ্ট হয়ে গেলে চা পাতার লিকার দিয়ে কন্ডিশনার বানিয়ে ফেলুন। প্রথমে চা পাতা সেদ্ধ করে পানি ঠান্ডা করে দিন এবং তাতে লেবুর রস মিশিয়ে দিন। এভাবে নিয়মিত ব্যবহার করুন তাহলে আপনার চুল হবে ঝলমলে।

খুশকির সমস্যায়

শীতকালে এলে চুলে খুশকি দেখা যায়। আপনার ব্যবহার করা চা পাতা ফেলে না দিয়ে চুলে মেখে নিন।তাতে খুশকির সমস্যা থেকে উপকার মিলবে।

চুল পরা সমস্যায়

নিয়মিত চুল ঝরে যাচ্ছে? এমন সমস্যা আপনি উদ্বিগ্ন হয়ে থাকেন। আর লিকার ঠান্ডা করে নিন। এরপর মাথার ত্বকে ব্যবহার করুন। এতে চুলের গোড়া মজবুত হয়ে চুল পড়া বন্ধ হয়ে যাবে।

চুল পাকা রোধ

বয়সের আগেই চুল পেকে যাচ্ছে। তাই চুল কিভাবে ঠিক করবেন তাই নিয়ে চিন্তিত। তবে আপনার চুলের যত্ন চায়ের লিকার একটি ভালো ওষুধ হতে পারে। চায়ের লিকার আপনার চুলের উপরে মেসেজ করুন।তবে চুল পাকা বন্ধ হয়ে যাবে।

কাঁচা চা পাতার উপকারিতা

চা পান স্বাস্থ্যের জন্য যেমন উপকারী তেমনি এর পাতা স্বাস্থ্যের পাশাপাশি ত্বক ও চুলের জন্য দারুন উপকারি। যে সকল সমস্যা হয় চা পাতার ব্যবহার করা যায় :
  • চায়ে এন্টি এক্সিডেন্ট হয়েছে যা কর্মশক্তি বৃদ্ধি করে।
  • চা পাতায় ক্যাফেইন রয়েছে যা ত্বকের নিচে রক্তজালকে সংকুচিত করে এবং ডার্ক সার্কেল দূর করে।
  • কাঁচা চা পাতায় রয়েছে ট্যানিন যা ত্বকের ফোলা ভাব দূর করে।

চা পাতার প্রকারভেদ

স্বাদ ও মানের কথা চিন্তা করে চা পাতায় গ্রেট নির্ধারণ করা হয়। আপনি সচেতন ভোক্তা হলে চায়ের সাত থেকে গ্রেট নির্ধারণ করতে পারেন। আংশিক ভাঙ্গা, পুরোপুরি চূর্ণ,অথবা পুরো একটি পাতার বিভিন্ন আকার প্যাকেটের গায়ে লেখা দেখে আপনি নির্ধারণ করতে পারেন।

এগুলো অতি মিহি চা পাতার গুড়ার ধরণ

  • OPD - Orange Pekoe Dust
  • BOPD - Broken Orange Pekoe Dust
  • BOPFD - Broken Orange Pekoe Fine Dust
  • FD - Fine Dust
  • D-A - Dust A
  • Spl. D - Special Dust
  • GD - Golden Dust
  • OD - Orthodox Dust

Fannings বা অপেক্ষাকৃত বেশি ছেঁড়া পাতার ধরণ

  • GOF - Golden Orange Fannings
  • FOF - Flowery Orange Fannings
  • BOPF - Broken Orange Pekoe Fannings
  • FBOPF - Flowery Broken Orange Pekoe Fannings

Broken leaf tea বেশি ছেঁড়া পাতার ধরন

  • BS - Broken Souchong
  • BPS - Broken Pekoe Souchong
  • GBOP - Golden Broken Orange Pekoe
  • FBOP - Flowery Broken Orange Pekoe
  • BOP - Broken Orange Pekoe
  • BOP1 - Broken Orange Pekoe One
  • GFBOP - Golden Flowery Broken Orange Pekoe
  • TGFBOP - Tippy Golden Flowery Broken Orange Pekoe
  • TGFBOP1 - Tippy Golden Flowery Broken Orange Pekoe Grade One
উপরে উল্লেখিত সকল তথ্য প্যাকেটের গায়ের লেখা থাকলে আপনি ধারণা করবেন। আপনার চা পাতার গেট সম্পর্কে। স্বাদ ও আপনার ব্যক্তিগত পছন্দের উপর নির্ভর করে আপনার ক্রয় করতে অসুবিধা হবে।

লেখকের মন্তব্য

সম্মানিত পাঠক, আপনাদেরকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাই। বর্তমান সমাজে চা একটি প্রচলিত পানীয়। নিত্যদিনের জীবনের পছন্দের তালিকায় যেহেতু চায়ের শক্তিশালী অবস্থান রয়েছে তাই তার উপকারিতা ও ক্ষতিকারক দিক সম্পর্কে ধারণা দেবার চেষ্টা করা হয়েছে। আমাদের লেখালেখি ভালো লাগলে সাথে থাকুন। ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আরএম আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়

comment url