তেলাপিয়া মাছের উপকারিতা ও অপকারিতা

তেলাপিয়া মাছ বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে চাষ হয়। ব্যাপক উৎপাদনশীলতার জন্য এই মাছ সর্বত্র প্রাপ্তিসাধ্য।তেলাপিয়া মাছ যেকোনো পরিবেশে চাষ করা যায়। পুকুর, জলাশয়, ডোবা এবং কৃত্তিম উপায়ে চাষ করা যায়।
তেলাপিয়া মাছের উপকারিতা ও অপকারিতা

ভূমিকা

সর্বত্র দৃশ্যমান তেলাপিয়া মাছটি একটি বিদেশী জাত। যার বৈজ্ঞানিক নাম oreochomis mossumbicus।এটিকে mossambique telapia বলেও ডাকা হয়। বাংলাদেশের নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়া এ মাছের জীবনধারণ ও বংশ বিস্তারের পক্ষে সহায়ক। তেলাপিয়া ডিম পেরে সেই ডিম বাচ্চা ফুটানোর জন্য মুখের ভেতর রেখে দেয়।বাংলাদেশের মানুষের চাহিদার বিপরীতে যোগানের বিষয়টি সহজসাধ্য করেছে এ মাছের চাষ। আজকে আমরা জানব তেলাপিয়া মাছের উপকারিতা, অপকারিতা ও নানা বিষয় সম্পর্কে।

তেলাপিয়া মাছের উপকারিতা ও অপকারিতা 

তেলাপিয়া মাছ খাব কিনা? এ মাছ ক্ষতিকর। এ মাছ খেলে নানা অসুখ হয় এ ধরনের অনেক বিতর্ক আছে এই মাছের মাথার উপরে। তাহলে আসল বিষয়টি কি? ফেমাস স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর কিনা। এ প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করা হোক। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এ মাছ স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর। তেলাপিয়া মাছকে বলা হয় Trash fish বা আবর্জনা মাছ। 

কেননা এই মাছটি নোংরা পরিবেশেই পালন করা হয়। দেশের নোংরা এবং পরিত্যক্ত জায়গা যেমন পচা ড্রেইন,টয়লেটের ট্যাংক, দূষিত ডোবা, পরিত্যক্ত জলাশয় ইত্যাদিতে এই মাছের চাষ লক্ষ্য করা যায়। এক জরিপে দেখা যায়, বিশ্বের প্রায় ১২০ টি দেশ তেলাপিয়া মাছ চাষ করে। এবং চাষকৃত জায়গার মান অত্যন্ত নিম্ন।

তেলাপিয়া মাছের উপকারিতা

মাছ মানে আমিষের বিশাল উৎস। তাছাড়া স্বাদের বিষয়টিও ভোক্তার কাম্য। তেলাপিয়া মাছ অত্যন্ত সুস্বাদু। তেলাপিয়া মাছে প্রচুর আমিষ পাওয়া যায়। বিশেষজ্ঞের মতে, তেলাপিয়া মাছে উচ্চমানের প্রোটিন,পটাশিয়াম, ভিটামিন বি -১২, ফসফরাসের মত বিভিন্ন উপাদানে পরিপূর্ণ।

তেলাপিয়া মাছের অপকারিতা

তেলাপিয়া মাছের উপকারিতা অনেক। বিশেষজ্ঞদের মতে, আবর্জনা এবং নোংরা পদার্থ খেয়ে প্রতি পালনের জন্য এ মাছ মানব স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর। তাছাড়া নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে চাষ করা গেলে এ মাছে কোন সমস্যা নেই। ১২০ টি দেশে চাষ হওয়া অধিকাংশ অসাধু ব্যবসায়ী নোংরা জায়গায় চাষ করেন। পুকুরের শ্যাওলা কিংবা ক্ষতিকারক আবর্জনা খেয়ে এই মাছ জীবন ধারণ করে। ফলে এ মাছ খেলে ক্ষতিকারক পদার্থ সমূহ শরীরের মধ্যে প্রবেশ করে। 

যেহেতু এই মাসে একটু রাক্ষুসে তাই সবকিছুই খায় তেলাপিয়া।যুক্তরাষ্ট্রের ফুড এন্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের এক রিপোর্টে দেখানো হয়েছে যে, তেলাপিয়া চাষে হাঁস, মুরগি কিংবা শুকরের দেহাবশেষ ব্যবহার করা হয়। মৃত পানি দেহ ভক্ষণের ফলে মানুষ স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর উপাদানগুলো তাদের শরীরে প্রবেশ করে। এই ক্ষতিকারক পদার্থগুলো শরীরের ভেতর প্রবেশ করে বিধায় বিশেষজ্ঞরা মত দেন যে এই মাছ মানুষের জন্য ক্ষতিকর। 

৮০০ বেশি নমুনায় সংগৃহীত তথ্য -উপাত্ত গবেষণা শেষে জানা গেছে যে, তেলাপিয়া মাছের শরীরে ডিবিউটিলিন ও ডাই অক্সিন নামক দুটি ক্ষতিকারক পদার্থের উপস্থিতি মিলেছে। ডিবিউটিলিন এমন একটি ক্ষতিকারক পদার্থ যা প্লাস্টিকে নানা রকম সরঞ্জাম তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। তেলাপিয়া মাছ হতে প্রাপ্ত ডিবিউটিলিন মানবদেহে প্রবেশ করলে হাঁপানি, এলার্জি ও স্থূলতা বৃদ্ধি পায়। এর চেয়েও ক্ষতিকর ডাইঅক্সিন। অধিক পরিমাণে তেলাপিয়া মাছ খেলে ডায়েক্সিন হতে ক্যান্সারের সম্ভাবনা থাকে।

তেলাপিয়া মাছে কি এলার্জি আছে

তেলাপিয়া মাছে এলার্জি নেই বললেই চলে। সামুদ্রিক মাছ এবং পুঁটি মাছে ব্যাপক এলার্জি রয়েছে।তেলাপিয়া মাছের বৈশিষ্ট্য 
তেলাপিয়া পিরানহা গোত্রের মাছ। এটি বাংলাদেশের কৈ,খলসা মাছের মত। তবে আকারে বৃহৎ এবং দেহ আইশ বিশিষ্ট। মাথা মোটা এবং দেখা চ্যাপ্টা। কয়েকটি রঙে তেলাপিয়া আলাদা আলাদা ভাগে বিভক্ত। তাছাড়া আকৃতিগত পার্থক্য রয়েছে। সাধারণত ৫০ গ্রাম থেকে শুরু হয়ে ৫০০ গ্রাম পর্যন্ত বাজারজাত করা হয়। তবে তেলাপিয়ার উন্নত জাত মনোসেক্স আকৃতিতে বিশাল হয়। একটি মনোসেক্স জাতীয় তেলাপিয়া মাছের ওজন তিন থেকে পাঁচ কেজি পর্যন্ত হতে পারে।

পাঙ্গাস মাছ খেলে কি হয় 

স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে চাষ করা প্রত্যেকটি মাছই স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।বাংলাদেশে যে উপায় পাঙ্গাস চাষ করা হয় তাতে ক্ষতির সম্ভাবনা খুব সীমিত। নর্দমা, টয়লেটের ট্যাংক, পরিত্যক্ত জলাশয়, দূষিত পানিতে চাষ করা মাছ ক্ষতিকর। কেননা মাছের ভক্ষণের সমস্তটুকুই প্রকারান্তরে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে। পাঙ্গাস মাছ খেলে উপকার হয়। 

পাঙ্গাস মাছের তেলে আছে ওমেগা থ্রি ভিটামিন। যা হার্টের ব্লক রোধ ও রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক করতে সাহায্য করে। তবে একটানা ব্যবহার ক্যান্সারের কারণ হতে পারে। পাঙ্গাস মাছ অত্যন্ত বিষাক্ত এই ধারণাটি ভুল। তবে মাছ সংরক্ষণ করতে যে সকল প্রিজারভেটিভ ব্যবহার করা হয় তা পরীক্ষা নিরীক্ষায় দেখা যায় মাছ খাওয়ার চাইতে এ প্রিজারভেটিভ শরীরের ক্ষতি করে বহুলাংশে।

নাইলোটিকা মাছের অপকারিতা 

নাইলেটিকা মাছ তেলাপিয়া মাছের পরিবারভুক্ত। ১৯৮৭ সালে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট থাইল্যান্ড থেকে বাংলাদেশে আমদানি করে। দ্রুত বর্ধনশীল এবং পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ এ মাছে তেমন কোনো ক্ষতিকারক পদার্থের উপস্থিতি মেলেনি। এই মাছ আফ্রিকা হতে উদ্ভূত। বাংলাদেশে পুকুর এবং ডোবায় মাছ পাওয়া গেলেও এটি মূলত মিঠা পানির মাছ। প্রোটিন, পটাশিয়াম এবং ভিটামিন বি -১২ এর জন্যই মাছটি এত সমাদৃত।

লেখকের মন্তব্য

প্রিয় পাঠক, বাংলাদেশে চাষযোগ্য তেলাপিয়া এবং পাঙ্গাস ও নাইলোটিকা মাছ নিয়ে উপকারিতা ও অপকারিতা বিষয়ে যে বিভ্রান্তি রয়েছে। আশা করি এই কলামটি পড়ার পর সব দ্বিধা কেটে যাবে। ব্লকটি পরে উপকৃত হলে আমাদের সাথে থাকবেন। ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আরএম আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়

comment url