পাতলা পায়খানা হলে কি কি ফল খাওয়া যাবে

স্বাভাবিকের চেয়ে পানির ন্যায় তরল পায়খানাকে পাতলা পায়খানা বলে। সাধারণত দিনে ৩ থেকে ৫ বার পানি সদৃশ পায়খানা হলে তাকে ডায়রিয়া ( diarrhoea ) বা পাতলা পায়খানা বলে ধরে নেয়া হয়।এটি মানুষের এমন এক ধরনের অসুখ যার ফলে শরীরের ভারী পদার্থগুলো নিসৃত হয়ে যায়। চিকিৎসা ত্রুটি বা অবহেলা হেতু বিষয়টি জটিল আকার ধারণ করতে পারে।এ অবস্থায় মৃত্যু ঝুঁকি সর্বোচ্চ।
পাতলা পায়খানা হলে কি কি ফল খাওয়া যাবে


ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানায় করণীয় ও আদ্যোপ্রান্ত

ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানার লক্ষণসমূহঃ
কতিপয় লক্ষণ প্রকাশ পেলে বোঝা যায় যে ডাইরিয়া বা পাতলা পায়খানা হচ্ছে।তা নিম্নোক্ত হলো।
অতি ঘন পিপাসা পাওয়া।
  • গলা,তালু,মুখ ও জিহ্বা শুকিয়ে যায়।
  • অপেক্ষাকৃত কম প্রস্রাব হয় বা একেবারে বন্ধ হয়ে যায়।
  • হলুদাভ বর্ণবিশিষ্ট গাঢ় প্রস্রাব হয়।
  • ক্লান্তি অনুভব করা ও হাপিয়ে যাওয়া।
  • চোখের কোঠরে চোখ স্বাভাবিকের চাইতে বেশি ঢুকে যায়।
  • শরীর খুব দুর্বল হয়ে যায়, দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাস হয়।
  • নাড়ি (Pulse) বা স্পন্দন দ্রুত কাজ করে।
  • পানিশূন্যতা বেশি হলে রোগী জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।
  • ত্বকের কার্যক্ষমতা নষ্ট হয়ে যাওয়া বা কুচকে যাওয়া।
  • চোখ দিয়ে ঝাপসা দেখা।
আরো পড়ুনঃ নবজাতক শিশুর সর্দি কাশি হলে করণীয়

পাতলা পায়খানা হলে মাছ খাওয়া যাবে কি

প্রচলিত জনশ্রুতি অনুসারে মাছ খাওয়া কে নিষিদ্ধ বলেই মানা হয়।তবে বাস্তবিকভাবে পাতলা পায়খানা হলে মাছ খাওয়ার বিষয়ে কোন নিষেধাজ্ঞা নেই।বরং মাছ খেলে অন্যান্য অবস্থার মতই উপকার পাওয়া যায়। যেহেতু এই সময়ে শরীরের ভারি পদার্থগুলো নিসৃত হয়ে যায়। তাই মাছই হতে পারে আপনার আমিষের ঘাটতি জনিত সমস্যায় সম্পূরক খাদ্য।

তবে এ বিষয়টি খেয়াল রাখা উচিত যে পাতলা পায়খানার সময়ে শরীর অত্যন্ত দুর্বল থাকে এবং হজম শক্তির অবনতি হয়। তাই আপনাকে নিশ্চিত করতে হবে যে মাছের রান্না এবং সেদ্ধ নিয়মমাফিক হয়েছে কিনা। মাছ মাংসে আমিষ থাকে তাই এ সকল খাদ্য হজমে বেগ পেতে হয়।

উল্লেখ্য যে,পাতলা পায়খানা চলাকালীন সময়ে পাকস্থলী ও যকৃতের কার্যক্ষমতা স্বাভাবিকের চেয়ে কম থাকে।বিধায় সহজে হজমযোগ্য ও চিকিৎসক কেবল ভাত,ডাল ও শাক সবজির মত সাধারণ খাদ্য গ্রহণের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তাছাড়া যেসব খাদ্য ফাইবার যুক্ত হয়ে থাকে তা এড়িয়ে যেতে বলা হয়।

পাতলা পায়খানা হলে কি চিড়া খাওয়া যাবে

পাতলা পায়খানা হলে সাধারণত পানিশূন্যতা দেখা দেয়।শরীর থেকে লবন ও পটাশিয়ায়াম জাতীয় উপাদানের ব্যাপক ঘাটতি লক্ষ্য করা যায়।এ সময় শরীরকে ধরে রাখতে প্রয়োজন হয় প্রচুর লবনাক্ত পানীয়।সেই লবনের বড় একটি উৎস হিসেবে ব্যবহার হয় স্যালাইন।তাছাড়া ডাব খাওয়া যেতে পারে।কেননা ডাবে প্রচুর পরিমানে পটাশিয়াম রয়েছে। পানিশূন্যতার বিকল্প হিসেবে চিড়ার কথা অনস্বীকার্য। চিড়ার পানি শরীরের নেমে যাওয়া পানি রোধে সর্বাধিক কার্যকর ও প্রমাণিত।

পাতলা পায়খানা হলে পাকা কলা খাওয়া যাবে কি 

কথায় আছে -শরীরের নাম মহাশয়, যা সওয়াবে তাই সয়।পাতলা পায়খানা চলাকালীন সময়ে পাকা কলার গুরুত্ব অনেক। এ সময় কলা খেলে পায়খানা ধীরে ধীরে শক্ত হতে থাকে। এর সাথে সামান্য দুধও খাওয়া যেতে পারে। যাদের পায়খানা কষা হয় তারা দুধ একটু বেশি পরিমাণে খেলে পায়খানা পাতলা হতে শুরু করে।

কি খেলে পাতলা পায়খানা বন্ধ হয় 

পাতলা পায়খানা যেদিন হয় পুরোটা দিনই শরীর দুর্বল থাকে। দুর্বল অবস্থায় আমিষ গ্রহনের চেষ্টা হিতে বিপরীত হতে পারে। তাই মাছ মাংস ডিম জাতীয় খাবার গুলো অথবা উচ্চ মসলা খাবার এড়িয়ে চলা বাঞ্ছনীয়। বিশুদ্ধ খাবার পানি, স্যালাইন, ডাবের পানি, চিড়ার পানি খেলে পাতলা পায়খানা দ্রুত বন্ধ হয়ে যায়।

পাতলা পায়খানা হলে কি কি ফল খাওয়া যাবে

ডায়রিয়ার সময়ে পটাশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া জরুরি। শরীর থেকে অধিক পানি নিঃসরণের ফলে শরীর নিস্তেজ হয়ে যায়।ডাবের পানি ও টক জাতীয় খাবার খাওয়া যেতে পারে। কলা, ডাল, আনারস, পেঁপে, নারিকেল ও দুধ প্রচুর পানি পানি খেলে তা শরীরের পক্ষেই ভালো।

বড়দের ডায়রিয়া হলে করণীয় কি 

সাধারণত একজন ব্যক্তিকে সারা দিনে দুই থেকে তিন লিটার জল পান করতে হয়। তাছাড়া শরীর ডিহাইড্রেট হয়। কিন্তু পাতলা পায়খানা চলাকালীন সময় ৮ থেকে ১২ গ্লাস পানি পান করা আবশ্যক । সোডিয়াম, ক্লোরাইড ও কার্বোহাইড্রেট যুক্ত খাবার গুলো বেশি খাওয়া প্রয়োজন। বিভিন্ন ফলের জুস বা স্যুপ করে খাওয়া যেতে পারে।

খাবার পানির সাথে ইলেকট্রোলাইট পাউডার মিশিয়ে খেলে পেটের ব্যাথা থেকে আরাম পাওয়া যায়। এছাড়া ডাবের পানির পটাশিয়াম শরীরকে হাইড্রেট রাখতে সাহায্য করে। পাতলা পায়খানা চলাকালীন সময়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকার বিকল্প নেই।এছাড়া পুষ্টিকর ও গরম গরম খাবার খাওয়া প্রয়োজন।

ডায়রিয়া হলে ডিম খাওয়া যাবে 

পশ্চিমবঙ্গের বিখ্যাত পুষ্টিবিদ ঈশানী গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ডিম যেহেতু আমিষ জাতীয় খাবার। তাই লুজ মোশানের দিনগুলোতে শরীর অধিক দুর্বল থাকায় প্রোটিন কে ভাঙতে শরীরের অনেক বেগ পেতে হয়। তাই ডাইরিয়ার দিনগুলোতে ডিম থেকে দূরে থাকায় ভালো।

ডায়রিয়া হলে আপেল খাওয়া যাবে কি

হ্যাঁ, অবশ্যই যাবে। কোষ্ঠকাঠিন্য ডায়রিয়া প্রতিরোধে আপেল একটি উত্তম মাধ্যম। পাতলা পায়খানা চলাকালীন সময়ে আপেলের খোসা ছিলে খেতে হবে। কেননা আপেলে যে দ্রবণীয় আঁশ থাকে লুজ মোশানে হজমের ক্ষেত্রে ধীর গতি আনে।সুতরাং পাতলা পায়খানা যাদের হয় তাদের জন্য আপেল অত্যন্ত উপকারী।

লেখকের মন্তব্য ঃ

সম্মানিত পাঠকবৃন্দ, ডায়রিয়ার সম্পর্কে উপযুক্ত আলোচনা করার চেষ্টা করা হয়েছে। পাতলা পায়খানায় করণীয় ও জানার মত সমস্ত আলোচনা এর ভেতর অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করা হয়েছে। তাই ভালো লাগলে লাইক, কমেন্ট, শেয়ার করে পাশে থাকতে ভুলবেন না। ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আরএম আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়

comment url