ব্রয়লার মুরগি খাওয়া কি ক্ষতিকর
ব্রয়লার মুরগিগুলো সাধারণত উৎপাদনের লক্ষ্যে ফার্মিং করা হয়। খামারে বাণিজ্যিক আকারে সম্প্রসারণ পদ্ধতিতে ব্রয়লার চাষ হয়। বাংলাদেশের মানুষের আমিষের প্রধান উপকরণ এ ব্রয়লার মুরগি।
ভূমিকা
ব্রয়লার কথাটির সাথে জড়িয়ে আছে একটি বিশেষ জাতের মুরগির পরিচিতি। ব্রয়লার মুরগি হলো মুরগির একটি প্রজাতি বা স্ট্রেইন। সর্বপ্রথম কানাডা ও ইউরোপের রাষ্ট্রগুলো থেকে ব্রয়লার বা লেয়ারের জাত তৈরি করা হয়। মিশরের ফায়ামিন মুরগির সাথে আমেরিকার রোড আইল্যান্ড জাতের মিশ্রণে যে মুরগি উৎপাদিত হয় তাকে সোনালী বলে।
ব্রয়লার মুরগিগুলো সাধারণত উৎপাদনের লক্ষ্যে ফার্মিং করা হয়। খামারে বাণিজ্যিক আকারে সম্প্রসারণ পদ্ধতিতে ব্রয়লার চাষ হয়। বাংলাদেশের মানুষের আমিষের প্রধান উপকরণ এ ব্রয়লার মুরগি।
ব্রয়লার মুরগির উপকারিতা ও অপকারিতা
দেশে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার পুষ্টি ও খাদ্য নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে ব্রয়লার মুরগি সাধারণ মানুষের কয় ক্ষমতার ভেতরে। ব্রয়লার মুরগি বাণিজ্যিকভাবে চাষ করার কারণে তুলনামূলকভাবে দেশি মুরগির চেয়ে কম দাম।উপকারিতা :-
- এতে রয়েছে ভিটামিন (ভিটামিন বি)।
- খনিজ পদার্থ (আয়রন ও জিংক)।
- ব্রয়লার মুরগির সফট মাসল হজমে দ্রুত সাহায্য করে।
- দ্রুত হজম হওয়ার কারণে শরীর এ থেকে সর্বোচ্চ পুষ্টি লাভে সক্ষম হয়।
- ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে হওয়ায় সব আয়ের মানুষ এটিকে সহজলভ্য মনে করে।
উপরিউক্ত উপকারগুলো ছাড়াও বাণিজ্যিকভাবে চাষের কারণে অতি অল্প সময়ে অধিক মাংস উৎপাদন করা যায়। দেশ ও জাতির ক্রমবর্ধমান চাহিদার কথা মাথায় রেখে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো অনায়াসেই অল্প সময়ে ক্ষুদ্র ভোক্তার নিকট পৌঁছে দিতে সক্ষম হচ্ছে। তাছাড়া সাধ্যের মধ্যে মানসম্মত মাংস বাংলাদেশের মানুষের খাদ্য তালিকায় স্থান করে নিয়েছে।
ব্রয়লার মুরগি খাওয়া কি ক্ষতিকর
কৃত্রিম উপায়ে খামারে প্রতিপালনের জন্য ব্রয়লার মুরগিতে প্রচুর চর্বি জমে থাকে। তাই ব্রয়লার মুরগী খেলে শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়তে থাকে। দেখা যায় দীর্ঘদিন খাবার ফলে কোলেস্টরেল জাতীয় অসুখ-বিসুখের প্রাদুর্ভাব বেড়ে যায়।অতি ক্ষণকালীন জীবন ও অল্প সময়ের মধ্যে ব্রয়লার মুরগিকে গড়ে তোলার জন্য নানা পদ্ধতি যা মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর সে সকল পদার্থ অনার্সে ব্যবহার করা হয়। মাত্রাতিরিক্ত ব্রয়লার সেবন মৃত্যুঝুঁকির কারণ হতে পারে।
আসুন জেনে নেওয়া যাক, এছাড়াও কি কি ক্ষতি ব্রয়লার মুরগি খেলে হতে পারে -
দ্য ইস্ট ম্যান এগ নামক এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য। ব্রয়লার মুরগি খাওয়ার ফলে যে সকল সমস্যা হয় তারা সেটিকেই দেখানোর চেষ্টা করেছেন।
- অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্টেন্স হ্রাস ব্রয়লার মুরগি লালন পালন করা হয় পোল্ট্রিতে। সেখানে নানা রকম অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয়। যেহেতু এ সকল মুরগির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তাই তাদের স্বাস্থ্য পরিচর্যার অংশ হিসেবে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয়। এ মুরগি খাবার ফলে অ্যান্টিবায়োটি আমাদের শরীরে প্রবেশ করে। যা আমাদের স্বাভাবিক অ্যান্টিবায়োটিক ক্ষমতাকে হ্রাস করে।
- কেমিক্যাল এর ব্যবহার
- তৃতীয় বিশ্ব দরিদ্র দেশগুলোতে মানুষের ঘাটতি পূরণের লক্ষ্যে যে উপায়ে মুরগি চাষ করা হয় তা অস্বাস্থ্যকর। নানা রকম কেমিক্যাল সহযোগে মুরগি প্রতিপালনের চেষ্টা করা হয়। যে সকল ব্যক্তি নিয়মিত ঔষধ গ্রহণ করেন তাদের উচিত এ পোল্টি্র ব্যবহার কমানো।
- ফুড পয়জনিং
- পোল্ট্রি মুরগির মাংসে ই -কোলাই নামক এক ধরনের ক্ষতিকারক ফুড পয়জনিং থাকে। বয়স্ক অথবা শিশুরা উভয় এ সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে।
- কোলেস্টরেল বৃদ্ধি
- দ্রুত বড় করার জন্য যে খাদ্য ব্রয়লার মুরগির জন্য ব্যবহার করা হয় তা স্বাস্থ্যের পক্ষে ঝুঁকিপূর্ণ। অনিয়মিত ব্যবহারে শরীরে মেদ, হার্ট অ্যাটাক অথবা কোলেস্টরেল জাতীয় অসুস্থতা বৃদ্ধি পেতে পারে।
- গর্ভধারণের সমস্যা
- ব্রয়ালারের ক্ষতিকারক অ্যান্টিবায়োটিক ডিম্বাণুতে ব্যাপক প্রভাব ফেলে। আর পুরুষের ক্ষেত্রে পুরুষত্বহীনতা কিংবা উৎপাদন সক্ষমতা নষ্ট হয়।
- সুতরাং দেখা যাচ্ছে উপরোক্ত গবেষণায় উপকারের চেয়ে ক্ষতির মাত্রা বেশি। তাই পারত পক্ষে ব্রয়লার মুরগির মাংস পরিত্যাগ করা।
প্রতিদিন কতটুকু মুরগি খাওয়া যাবে
বাণিজ্যিক উপায়ে চাষবাসের জন্য ব্রয়লার মুরগির দাম সহজলভ্য। আমাদের খাদ্য তালিকায় সাধারণত সপ্তাহে একবার মুরগি থাকে। তাই মনে হয় প্রতিদিন কতটুকু মুরগি খাওয়া প্রয়োজন। মুরগির মাংস খাওয়ায় সেরকম লিমিট নেই। তবে তা নির্ভর করে রন্ধন প্রক্রিয়ার উপরে। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য বিষয়ক এক ওয়েবসাইটে যুক্তরাষ্ট্রের খ্যাতনামা
পুষ্টিবিদ লরেন মনে কা'র তিনার অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন।তিনি বলেন, যেহেতু আমি একজন পুষ্টিবিদ তাই মুরগির মাংসের উপকারিতা সম্পর্কে আমি জানি। আমি কখনোই মুরগির মাংসের সে স্বাদ ভুলবো না । তবে আপনার খাদ্য তালিকায় থাকা মুরগির মাংসের রন্ধন প্রক্রিয়াটি হতে হবে স্বাস্থ্যসম্মত।
যেমন -'বেগইকড' 'গ্রিলড' ও সৌতে রান্না করা মুরগি যেমন স্বাস্থ্যকর তেমনি লম্বা সময় ডুবো তেলে ভাজা মুরগি এবং ততটাই অস্বাস্থ্যকর। রান্না করা মুরগিতে পরে চর্বি, লবণ কিংবা চিনি ব্যবহার করা স্বাস্থ্যের পক্ষে মারাত্মক ক্ষতিকর।
এছাড়া স্বাস্থ্যসম্মত মুরগির মাংস যে সকল স্বাস্থ্যগত উন্নতি ঘটায় তাহলো:
- আর শক্তিশালী করে।
- স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে।
- পেট ভরা রাখে।
- অবসর দূর করে।
- মানসিক উৎকর্ষতা সাধনে সহায়ক।
মুরগীর মাংস খেলে কি ওজন বাড়ে
আনুমানিক ২০০০ বছর আগে ভারতীয় উপমহাদেশে মুরগি প্রতিপালন শুরু হয়। তবে ইদানিংকালে ব্রয়লার নামে মুরগির একটি বিশেষ প্রজাতি আত্মপ্রকাশ করে। যা বাণিজ্যিক আকারে পালন করা হয়। ব্রয়লার মুরগিতে চর্বি থাকায় তা মেদ বাড়ায় এবং ওজন দ্রুত বর্ধন করে।
তাছাড়া দেশি মুরগির চর্বি কম থাকায় তা ওজন বাড়ায় না বরং স্বাস্থ্যগত উপায় ওজন কমাতে সহায়তা করে। তাই বলা যায় যদি আপনি স্বাস্থ্যগত উপায়ে ওজন কমাতে চান তাহলে আপনার সাথে তালিকায় মুরগির মাংস রাখুন।
উপসংহার
প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় আমিষের ব্যবস্থা থাকা জরুরী। আর আমিষের প্রধান উৎস হিসাবে মাছ, মাংস, ডিম ও দুধকে উৎস হিসাবে মানা হয়। মাংসের চাহিদা পূরনে মুরগির উন্নত জাত ব্রয়লার অন্যতম। তবে নিয়ম করে সপ্তাহে একবার অথবা যত কম খাওয়া যায় ততোই ভালো।
লেখকের মন্তব্য
সম্মানিত পাঠকবৃন্দ, আলোচনাটি ব্রয়লার মুরগির উৎপত্তি, উপকার, ক্ষতি এবং জরুরী বেশ কয়টি দিক নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে । যা আপনার জ্ঞানকে আরো সমৃদ্ধ করবে।কাজেই উপকৃত হলেই লাইক কমেন্ট করে আমাদের সাথে থাকুন। ধন্যবাদ।
আরএম আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়
comment url