শহীদুল্লাহর মতে বাংলা ভাষার উৎপত্তি কোন ভাষা থেকে
পৃথিবীতে বর্তমানে ৭,০৯৯ টি ভাষা প্রচলিত আছে। তার মধ্যে বাংলা অন্যতম। ভারতবর্ষের উত্তর-দক্ষিণ পূর্বে অবস্থিত রাজ্যসমূহ (পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, ত্রিপুরা, বিহার) নেপাল ও বাংলাদেশ সহ আফ্রিকার দেশ সিয়েরা লিওনে বাংলা ভাষাভাষী মানুষের দেখা পাওয়া যায়।
মাতৃভাষা হিসেবে বিশ্ব ভাষা পরিবারে বাংলা ভাষার অবস্থান পঞ্চম এবং বহুল ব্যবহৃত ভাষা তালিকায় সপ্তম।ভাষা বিকাশের ইতিহাস পর্যবেক্ষণে সবচেয়ে বেশি বিবর্তিত হয়েছে বাংলা ভাষা। তাছাড়া মাতৃভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেতেও এ ভাষাকে অর্জন করে নিতে হয়েছে বহু বন্ধুর পথ।
ভূমিকা
১৯৫২ সালে বাংলা কে মাতৃভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠার জন্য বাংলাদেশে "ভাষা আন্দোলন " অনুষ্ঠিত হয়। যাতে প্রাণ উৎসর্গ করে একদল তরুণ। ইতিহাসে ভাষার জন্য জীবন উৎসর্গ করার নজির আর নেই।
ইন্দো ইউরোপীয় ভাষা থেকে বাংলা ভাষার উৎপত্তি
বাংলা ভাষার উৎপত্তি ঘটে ইন্দো ইউরোপীয় ভাষা গোষ্ঠী হতে।মূলত সংস্কৃত ভাষায় হচ্ছে আদিরুপ।শতম ও কেন্তুম এ দুটো প্রকরণ হলো কিন্তু ইউরোপীয় ভাষা গোষ্ঠীর দুটি শাখা। শতম শাখা হতে আবার আর্য ভাষার উৎপত্তি হয়। আর যদি ধর্মগ্রন্থের নাম বেদ। বেদের ভাষা হয় এর নাম হলো বৈদিক ভাষা। প্রাচীন ভারতের প্রধান ভাষা হল আর্য ভাষা। সৃষ্টির সপ্তম শতকে ভাষাবিজ্ঞানী পানিনি এ বৈদিক ভাষায় কিছু পরিবর্তন আনেন তাই একে সংস্কৃত বলা হয়। এ অর্থে যে, সংস্কার করা হয়েছে তাই এ ভাষার নাম দেওয়া হয় সংস্কৃত।
শহীদুল্লাহর মতে বাংলা ভাষার উৎপত্তি কোন ভাষা থেকে
বাংলা ভাষার উৎপত্তি সম্পর্কে ইতিহাসবেত্তাগণের ভিতরে মতবিরোধ আছে। ডক্টর মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ মনে করেন খ্রিস্টীয় সপ্তম শতকে মাগধী প্রাকৃত ভাষা থেকে বাংলা ভাষার উৎপত্তি। ভারতীয় আর্য ভাষা হতে বাংলা ভাষার উৎপত্তি। প্রাচীন ভারতে অনার্যদের বসবাস ছিল। অনার্যদের হটিয়ে এখানে বসবাস শুরু করে আর্যরা।এর সময়কাল ১২০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ। রাজ্য ভাষা তিনটি স্তর রয়েছে। সেগুলো নিচে বর্ণনা করা হলো :
- প্রাচীন ভারতীয় আর্য ভাষা (বৈদিক, সংস্কৃত)।
- মধ্য ভারতীয় আর্য ভাষা (পালি,প্রাকৃত ও অপভ্রংশ)।
- নব্য ভারতীয় আর্য ভাষা (বাংলা হিন্দি মারাঠি আসামি ইত্যাদি)।
বাংলা ভাষার জননী কে
ইন্দো ইউরোপীয় ভাষা গোষ্ঠীর একটি রূপ হচ্ছে বৈদিক ভাষা। যা মূলত শতম ভাষা প্রকরণ থেকে উৎপত্তি লাভ করে। যেহেতু বাংলা ভাষার মূল সূত্রপাত সংস্কৃতের হাত ধরে হয় তাই সংস্কৃত ভাষাকেই বাংলা ভাষার জননী বলা হয়। এ সংস্কৃত ভাষায় তখনকার বহু পুস্তক লিপিবদ্ধ করা হয়। খুব অল্প সময়ে পুরো ভারতবর্ষে সংস্কৃত ভাষা ব্যপ্তি লাভ করতে থাকে। সংস্কৃত ভাষা ব্যবহার ও উচ্চারণে খানিকটা অসুবিধা পরিলক্ষিত হওয়ায় পরে কথ্যরূপে যে ভাষা আত্মপ্রকাশ করে তাকে পালি ভাষা বলে।
বাংলা ভাষার ইতিহাস
বাংলা ভাষা ইন্দো ইউরোপীয় ভাষা গোষ্ঠীর একটি।যা দক্ষিণ এশিয়ার বাঙালি জাতিসত্তার প্রধান লিখিত ও মৌখিক ভাষা। ভাষা ব্যবহারের দিক থেকে এটি বিশ্বে ষষ্ঠ এবং মাতৃভাষীয় ভাষা হিসেবে ইন্দো ইউরোপীয় ভাষা পরিবারে অবস্থান পঞ্চম। সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে সরকারিভাবে ব্যবহৃত ভাষায় বাংলাদেশ প্রথম যে কিনা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ব্যবহার করে।
এছাড়া ভারতের পূর্বাঞ্চলে প্রদেশ পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, ত্রিপুরাতে ব্যাপক সংখ্যায় বাংলা ব্যবহার করতে দেখা যায়। আমাদের প্রাণের ভাষা বাংলা কিভাবে আজকের এই অবস্থায় রূপ নিল তার ইতিহাস সুদীর্ঘ। আসুন, এ পৌঁছায় জেনে নেই বাংলা ভাষার উৎপত্তির ইতিহাস। চেষ্টা করব ৭০০০ বছর আগে এবং সাড়ে পাঁচ হাজার বছর খ্রিস্টপূর্বাব্দে ইন্দো ইউরোপীয় ভাষা গোষ্ঠীর একটি শাখা শতমের উৎপত্তি হয়। সেই শতম থেকে একটি আর্য ভাষা উৎপত্তি লাভ করে।
প্রথমে ভারতবর্ষে আর্যদের বসবাস না থাকায় এখানে ভাষাটি বিস্তার লাভ করেনি। যখন ইউরোপ থেকে আর যারা ভারতে বসবাস শুরু করলেন তাদের হাত ধরেই আর্য ভাষা প্রতিষ্ঠা লাভ করে। ডঃ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ এবং তার সহযোগীরা মনে করেন যে,সংস্কৃত থেকে নয় বরং প্রকৃত ভাষা থেকেই বাংলা ভাষার উৎপত্তি লাভ হয়েছে।
সংস্কৃত ভাষা জটিল ও দুর্বোধ্য থাকায় তা ছিল উঁচু শ্রেণির ভাষা।সাধারণত ধর্মশাস্ত্রজ্ঞ কার্যাদিতে সংস্কৃত ভাষা বেশি ব্যবহার হতো। সাধারণ মানুষের কথ্য ভাষায় বেশি ব্যবহার হত প্রাকৃত ভাষা। প্রাচীন ভারতে মনের ভাব প্রকাশের জন্য নানান ভাষারীতি প্রচলিত ছিল। আমাদের নদীবেষ্টিত অঞ্চলের মানুষ যে ভাষায় কথা বলতেন তাহলে মাগধী।জনসাধারণের এই মুখের ভাষায় পরবর্তীতে রূপান্তরিত হয়ে বাংলা ভাষায় পরিণত হয়।
বাংলা ভাষার উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ
জগতের বুদ্ধি ভিত্তিক প্রাণীর ভেতরে মানুষের ভাষা আছে । ভাষা ব্যবহার করে মানুষ অপরাপর যোগাযোগ রক্ষা করে ।ভাষার উৎপত্তি ভাষা গবেষকদের মতে, প্রায় ৫০ হাজার কিংবা ১,০০০০০ বছর আগে মানুষ প্রথম ভাষা ব্যবহার করে। প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলো থেকে প্রাপ্ত কিংবা অনুমিত জরিপ বলছে , আফ্রিকানরা সর্বপ্রথম ভাষার সূত্রপাত করেছিল। গবেষকদের অনুমান , বর্তমান পৃথিবীতে যতগুলো ভাষা আছে, সেসবের আদি উৎস হলো আফ্রিকার ঐ প্রাচীন জনপদের ভাষা।
আফ্রিকা থেকে মানুষ যখন পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়তে লাগলো লাগলো , তখন তাদের আদি ভাষাও বদলে যেতে শুরু করে। সেই ভাষা শাখা-প্রশাখা বিস্তার লাভ করে জন্ম হয় আরো নতুন নতুন ভাষার। এভাবে পৃথিবীর ভাষাগুলোকে বিভিন্ন ভাষাগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত করা হয়, যেমন: ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাগোষ্ঠী, অস্ট্রো-এশীয় ভাষাগোষ্ঠী, আফ্রো-এশীয় ভাষাগোষ্ঠী, চীনা-তিব্বতি ভাষাগোষ্ঠী, মালয়-পলিনেশীয় ভাষাগোষ্ঠী, নাইজার-কঙ্গো ভাষাগোষ্ঠী, দ্রাবিড়ীয় ভাষাগোষ্ঠী ইত্যাদি।
একটি ভাষাগোষ্ঠীর সব ভাষা এক পরিবারভুক্ত। আর সব ভাষাগোষ্ঠীই একটি মহাপরিবারের অন্তর্ভুক্ত। আর তা হলো আফ্রিকার সেই আদিম ভাষা। বর্তমান বিশ্বের ভাষাগুলোর ব্যাকরণ বিশ্লেষণ করে নোয়াম চমস্কির মতো ভাষাবিদদের ধারণা, এসব ভাষার পেছনে একটি সার্বজনীন ব্যাকরণ আছে বলেই সব ভাষার মূল এক।বাংলা ভাষার ইতিহাস জানতে হলে আমাদের পিছিয়ে যেতে হবে কয়েক হাজার বছর আগে। তখন ভারতের প্রাচীন ভাষাগুলোকে বলা হতো প্রাচীন আর্য ভাষা।
আনুমানিক ৪০০০ থেকে ১০০০ বছর আগে প্রোটো ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষায় কথা বলা মধ্য-এশিয়ার জনগোষ্ঠী পশ্চিম আর পূর্বদিকে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে, আর তাদের ভাষাও বিভিন্ন শাখার সৃষ্টি করে। এরই একটি শাখা হলো ইন্দো-ইরানীয় ভাষাগোষ্ঠী। আর ইন্দো-ইরানীয় ভাষাগোষ্ঠীর একটি শাখা ইন্দো-আর্য বা ভারতীয়-আর্য ভাষা।
ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাগোষ্ঠী
ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাগোষ্ঠীর পরিধি ছিল ইউরোপ থেকে ভারত পর্যন্ত বিস্তৃত। মূলত, ইন্দো বলতে ভারতীয় উপমহাদেশ, এবং ইউরোপীয় বলতে ইউরোপ মহাদেশকে বোঝায়। পৃথিবীর অর্ধেকেরও বেশি মানুষ এই পরিবারের ভাষাগুলোতে কথা বলে থাকে। আমাদের মাতৃভাষা বাংলাসহ, হিন্দি, নেপালি, ইংরেজি, গ্রিক, ল্যাটিন, ফারসি, ফরাসি, ডাচ ইত্যাদি ভাষাও ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত। ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাগোষ্ঠী দুটি ভূখণ্ডে বিভক্ত হওয়ার কারণে এই ভাষাগোষ্ঠীকে দুটি শাখাতে ভাগ করা হয়: শতম ও কেন্তুম।
শতম শাখাটি থেকে ভারতের, আর কেন্তুম শাখা থেকে ইউরোপের বিভিন্ন ভাষা এসেছে।ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাগোষ্ঠীর শাখা খ্রিষ্টপূর্ব ২০০০ সাল থেকে ইন্দো-ইউরোপীয় পরিবারের ভাষাভাষী লোকেরা ইউরোপ ছাড়িয়ে আটলান্টিকের উপকূল এবং ভূমধ্যসাগরের উত্তর দিকে আসতে শুরু করে। পারস্য ও ভারত জয়ের মধ্য দিয়ে তারা ছড়িয়ে যায় এশিয়ার দূর এলাকাসমূহে। সমসাময়িক সিন্ধুর অধিবাসীগণও পূর্ব (গাঙ্গেয় সমভূমি), পশ্চিম এবং আফগানিস্তানে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। খ্রিষ্টপূর্ব ১০০০ অব্দের মধ্যে দুটি ভাষা-শাখা, ভারতীয় আর্যভাষা (ইন্দো-আর্য) এবং ইন্দো-ইরানীয় ভাষা আলাদা হয়ে যায়।
ভারতীয় আর্যভাষার ইতিহাসে তিনটি প্রধান স্তর লক্ষ্য করা যায়। প্রথম স্তরটির নাম হলো বৈদিক ভাষা, যার সময় খ্রিষ্টপূর্ব ১২০০ থেকে খ্রিষ্টপূর্ব ৮০০ অব্দ। এই আর্যভাষা উঁচু গোত্রের মানুষদের মধ্যেই প্রচলিত ছিল। সাধারণ মানুষের কাছে বেদের ভাষা বা বৈদিক ভাষা দুর্বোধ্য মনে হতো। এছাড়া রাষ্ট্রীয় ও ধর্মীয় প্রয়োজনে পন্ডিতরাও এটি ব্যবহার করতেন। বেদের শ্লোকগুলোও এই ভাষায় লেখা হয়েছিল।
বৈদিক বা বেদের ভাষা; Image source: The British Library
তারপরের স্তর হলো সংস্কৃত ভাষা, যার সময় খ্রিষ্টপূর্ব ৮০০ থেকে খ্রিষ্টপূর্ব ৪৫০ অব্দ পর্যন্ত। খ্রিষ্টপূর্ব ৪০০ অব্দের দিকে ব্যাকরণবিদ পাণিনির হাতে এটি চূড়ান্তভাবে বিধিবদ্ধ হয়। বৈদিক ও সংস্কৃত এই দুই ভাষা হলো প্রাচীন ভারতীয় আর্যভাষা। খ্রিস্টীয় দ্বিতীয় শতকে রচিত কালিদাসের কাব্য ও নাটকের ভাষা ছিল সংস্কৃত। রামায়ণ ও মহাভারতও সংস্কৃত ভাষাতেই রচিত হয়েছিল। এমনকি, এখনও সংস্কৃত ভাষা ভারতে ব্যাপকভাবে পঠিত এবং একটি পবিত্র ভাষা হিসেবে স্বীকৃত।
এর পরের স্তর প্রাকৃত ভাষা। এই ভাষাগুলো মধ্যভারতীয় আর্যভাষা হিসেবে পরিচিত। খ্রিষ্টপূর্ব ৪৫০ অব্দ থেকে ১০০০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত এ ভাষাগুলোই কথ্য ও লিখিত ভাষা হিসেবে ভারতের বিভিন্ন স্থানে প্রচলিত থাকে। ধারণা করা হয়, প্রাচীন ভারতের প্রাকৃত ভাষাগুলোর মধ্যে পালি অন্যতম, যার জন্ম খ্রিষ্টের জন্মেরও কমপক্ষে ছয়শ বছর আগে। সংস্কৃতের সাথে এর সম্পর্ক অনেকটা বোনের মতো।
পালি ছিল মধ্য বিহারের মগধ অধিবাসীদের মুখের ভাষা। সংস্কৃতের মতো পালিরও মৃত্যু ঘটেছে বহু শতাব্দী আগেই। অর্থাৎ, এখন আর এই ভাষার কোনো স্থানীয় জাতি নেই, বা সেই অর্থে মাতৃভাষা হিসেবে ব্যবহারের মানুষ নেই; কেবল সাহিত্যিক ও ধর্মীয় ভাষা হিসেবেই ব্যবহৃত হয়। গৌতম বুদ্ধ এই ভাষাতেই ধর্ম প্রচার করেছিলেন। মূলত, একটি সাধারণ প্রাদেশিক ভাষা হয়েও এটি ক্রমান্বয়ে শক্তিশালী ভাষা হয়ে উঠেছিল, যা তাকে বসিয়েছে চিরায়ত ভাষার আসনে। ফলে এই ধর্মমত সহজেই সর্বজনগ্রাহ্য হয়ে উঠতে সক্ষম হয়।
এই প্রাকৃত ভাষাগুলো থেকে অপভ্রংশ বা বিকৃত হয়ে বিভিন্ন ভাষা, যেমন: বাংলা, হিন্দি, গুজরাটি, মারাঠি, পাঞ্জাবি প্রভৃতির জন্ম। সংস্কৃত ব্যাকরণবিদ পতঞ্জলির মহাভাষ্য গ্রন্থে সর্বপ্রথম ‘অপভ্রংশ’ শব্দটির উল্লেখ পাওয়া যায়। তিনি সংস্কৃত থেকে উদ্ভূত কিছু অশিষ্ট শব্দকে নির্দেশ করার জন্য শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন। বর্তমান ভাষাবিদদের মতে, সমস্ত প্রাকৃত ভাষারই শেষ স্তর হলো অপভ্রংশ, এবং এই অপভ্রংশগুলো থেকেই সমস্ত নব্য ইন্দো-আর্য ভাষার জন্ম।
উদাহরণস্বরূপ, পূর্ব ভারতে প্রচলিত মাগধী প্রাকৃত ভাষা থেকে পূর্বী অপভ্রংশ উদ্ভূত হয়েছিল, এবং সেই পূর্বী অপভ্রংশ থেকে মগহী, মৈথিলী ও ভোজপুরী- এই তিনটি বিহারী ভাষা এবং বাংলা, অসমীয়া ও ওড়িয়া- এই তিনটি গৌড়ীয় ভাষার উৎপত্তি ঘটে। অন্যদিকে, পশ্চিমের শৌরসেনী অপভ্রংশ থেকে হিন্দি ও অন্যান্য নব্য ইন্দো-আর্য ভাষার উদ্ভব হয়।
ভাষাবিদ ডক্টর সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় মনে করেন, পূর্ব মাগধী অপভ্রংশ থেকেই এসেছে বাংলা, আসামি ও ওড়িয়া ভাষা। তাই আসামি ও ওড়িয়ার সাথে বাংলার খুব ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। এছাড়া মৈথিলি, মগহি, ভোজপুরিয়া ভাষার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে বাংলার, কারণ সেগুলোও মাগধী অপভ্রংশের অন্য দুটি শাখা থেকে এসেছে। আরেক ভাষাবিদ ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, যিনি বাংলা ভাষার উৎপত্তি সম্পর্কে ভিন্ন মত পোষণ করেন। তার মতে, গৌড়ীয় প্রাকৃত থেকে গৌড়ীয় অপভ্রংশ হয়েই বাংলা ভাষার উৎপত্তি ঘটে ।
ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ তার ‘বাঙ্গালা ভাষার ইতিবৃত্ত’ গ্রন্থে তালিকার মাধ্যমে ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাগোষ্ঠী থেকে বাংলা ভাষার ক্রমবিবর্তনের ধারা উল্লেখ করেছেন। পাঠকদের জন্য তালিকাটি নিচে দেওয়া হলো:
- ইন্দো-ইউরোপিয়ান ভাষাগোষ্ঠী(খ্রিষ্টপূর্ব ৩৫০০-২৫০০)
- শতম(খ্রিষ্টপূর্ব ২৫০০-১২০০)
- আর্যভাষা(খ্রিষ্টপূর্ব ২০০০-১২০০)
- প্রাচীন ভারতীয় আর্যভাষা(খ্রিষ্টপূর্ব ১২০০-৮০০)
- আদিম প্রাকৃত ভাষা(খ্রিষ্টপূর্ব ৮০০-৫০০)
- প্রাচীন প্রাচ্য প্রাকৃত ভাষা এবং পালি(খ্রিষ্টপূর্ব ৫০০-২০০ খ্রিষ্টাব্দ)
- গৌড়ীয় প্রাকৃত(২০০-৪৫০ খ্রিষ্টাব্দ)
- গৌড়ীয় অপভ্রংশ(৪৫০-৬৫০ খ্রিষ্টাব্দ)
- প্রাচীন যুগ(৬৫০-১২০০ খ্রিষ্টাব্দ)
- সন্ধিযুগ(১২০০-১৩৫০ খ্রিষ্টাব্দ)
- মধ্যযুগ(১৩৫০-১৮০০ খ্রিষ্টাব্দ)
- আধুনিক যুগ(১৮০০- বর্তমান)
বাংলা ভাষার ক্রমবিবর্তন
এখানে এসে বাংলা ভাষার এই বিবর্তনকে আমরা তিনটি সময়ে ভাগ করতে পারি: প্রাচীনযুগের বাংলা, মধ্যযুগের বাংলা এবং আধুনিক যুগের বাংলা।প্রাচীনযুগ (৬৫০-১২০০ খ্রিষ্টাব্দ)চর্যাপদযেকোনো ভাষার ক্রমবিবর্তন সম্পর্কে জানতে হলে সেটির লিখিত নমুনার দরকার হয়। এখন পর্যন্ত বাংলা ভাষার সর্বপ্রাচীন যে নমুনা পাওয়া গেছে, তা হলো চর্যাপদ। চর্যাপদের অন্য অনেকগুলো নামের মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হলো চর্যাগীতিকোষ, দোহাকোষ, চর্যাশ্চর্যবিনিশ্চয়, এবং চর্যাগীতিকা।
ধারণা করা হয়, এটি পাল আমলে রচিত।মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী ১৯০৭ সালে নেপালের রাজদরবার (রয়েল লাইব্রেরি) থেকে একটি পুরোনো পুঁথি আবিষ্কার করেন। এই পুঁথিই আমাদের কাছে চর্যাপদ নামে পরিচিত। বাংলা সাহিত্যের প্রাচীনতম নিদর্শন এই চর্যাপদ। পরে আচার্য সুনীতি কুমার চট্টোপাধ্যায় ও ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ গবেষণার মাধ্যমে প্রমাণ করেন- এই
চর্যাপদই বাংলা সাহিত্যের আদি নিদর্শন। তবে এর রচনাকাল নিয়ে তাদের মধ্যে মতপার্থক্য আছে। ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর মতে এর রচনাকাল সপ্তম থেকে দ্বাদশ শতাব্দী (৬৫০-১২০০ খ্রিষ্টাব্দ), আর আচার্য সুনীতি কুমার চট্টোপাধ্যায় মনে করেন এর রচনাকাল দশম থেকে দ্বাদশ শতাব্দী (৯৫০-১২০০ খ্রিষ্টাব্দ)।
চর্যাপদের বাঙালি কবি ভুসুকুপা। তার লেখায় ফুটে উঠেছে বাংলার বিভিন্ন রূপবৈচিত্র। তার লেখা ৪৯ নং চর্যার পদটি হলো:
বাজনাব পাড়ী পঁউআ খাঁলে বাহিউঅদব বঙ্গাল দেশ লুড়িউ ।।আজি ভুসুকু বাঙ্গালী ভইলী,নিঅ ঘরিণী চণ্ডালেঁ লেলী ।।
এর আধুনিক বাংলা অনুবাদ হলো:
বজ্ররূপ নৌকায় বেয়ে পাড়ি দেই পদ্মার খাল,দেশ লুট করে নিল অদয় বাঙ্গাল।ভুসুকু, বাঙালি হলি আজ থেকে ওরে,নিজের গৃহিনী গেল চাঁড়ালের ঘরে।
আবার কুক্কুরীপা ২ নং পদে একটু রসিকতা করে লিখেছেন:
দুলি দুহি পিটা ধরন ন জাই।রুখের তেন্তুলি কুম্ভীরে খাঅ।।
এর বাংলা অনুবাদ:
মাদী কাছিম দোহন করে দুধ পাত্রে না রাখা যায়।গাছের তেঁতুল কুমিরে খায়।
এখানে উল্লেখযোগ্য কিছু কিছু শব্দ সহজেই বোঝা যায়, কারণ এগুলো এখনও বাংলায় ব্যবহার হচ্ছে। মূলত, চর্যাপদ রচনাকারীরা ছিলেন বৌদ্ধ সহজিয়া, এবং তাদের অনেকেরই আদি নিবাস ছিল এই বঙ্গে। বৌদ্ধ পাল বংশের শাসনামলের অবসানে হিন্দু সেন বংশের শাসন শুরু হলে বেশিরভাগ বৌদ্ধকে নিজ দেশ ছেড়ে চলে যেতে হয়েছিল। ফলে এসব সহজিয়ারা তাদের সাথে করে চর্যাপদের সাধনসঙ্গীতগুলো নেপালে নিয়ে চলে যায়।
মধ্যযুগ (১৩৫০-১৮০০ খ্রিষ্টাব্দ)
মুসলমানরা বাংলাদেশে আসার আগে এখানে মূলত বৌদ্ধধর্ম ও সনাতন ধর্ম ছিল। সনাতন ধর্ম আবার নানা ভাগে, যেমন- শৈব, শাক্ত, বৈষ্ণব ইত্যাদিতে বিভক্ত ছিল। এছাড়াও ছিল বর্ণবাদ প্রথার চারটি রূপ- ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শূদ্র। সাধারণ মানুষেরা কথোপকথনের জন্য একটি আলাদা কথ্য ভাষারীতি গড়ে উঠেছিল। কিন্তু ধর্মাচরণের জন্য বৌদ্ধরা পালি এবং সনাতন ধর্মালম্বীরা সংস্কৃত ভাষার ব্যবহার করতো।
মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্য ছিল ধর্মনির্ভর। দেব-দেবীর আরাধনা ও প্রেম-ভালোবাসা ছিল এই যুগের সাহিত্যের প্রধান উপকরণ। বাংলা সাহিত্যের আদিমধ্য যুগ, তথা প্রাক-চৈতন্য যুগে বাংলা ভাষায় লেখা সর্বপ্রথম আখ্যানকাব্য শ্রীকৃষ্ণকীর্তন। বড়ু চণ্ডীদাস এর রচয়িতা। এ কাব্যের মূল উপজীব্য রাধা ও কৃষ্ণের প্রেমকাহিনি। সমগ্র কাব্যটি তেরোটি খণ্ডে বিভক্ত। কাব্যের প্রধান তিন চরিত্র রাধা, কৃষ্ণ ও বড়াই। এই কাব্যে বেশ কয়েকবার উদ্ধৃত মর্মস্পর্শী একটি পদ নিচে উল্লেখ করা হলো:
কে না বাঁশি বাএ বড়ায়ি কালিনী নই কূলে।কে না বাঁশি বাএ বড়ায়ি এ গোঠ গোকুলে।আকুল শরীর মোর বেয়াকুল মন।বাঁশীর শবদেঁ মো আউলাইলোঁ বান্ধন।
শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যের কিছু অংশ;
এক মুখে তোর রূপ কহিতে না পারী।সর্বাঙ্গে সুন্দরি রাধা মোহিলী মুরারী॥
১৪৮৬ খ্রিষ্টাব্দে নবদ্বীপে জন্ম হয় শ্রীচৈতন্যদেবের। তার প্রচারিত বৈষ্ণব ধর্মদর্শন প্রাচীনপন্থী হিন্দুদের আকৃষ্ট করলেও অনেক সনাতন হিন্দু এই বৈষ্ণব মতকে গ্রহণ করেনি। হিন্দু ধর্মের আভ্যন্তরীণ বিভাজন সত্ত্বেও এই সকল বৈষ্ণব ভক্তরা তাদের মতামত প্রতিষ্ঠা ও প্রচারের জন্য রচনা করেন বৈষ্ণব পদাবলী। বৈষ্ণব পদাবলীতে জ্ঞানদাসের একটি উক্তি হলো:
সুখের লাগিয়া এ ঘর বাঁধিনুঅনলে পুড়িয়া গেল।
বৈষ্ণব মহাজনেরা চৈতন্যদেবকে দেখেছিলেন রাধাকৃষ্ণের মিলিত বিগ্রহ রূপে:
রাধাকৃষ্ণ একাত্মা দুই দেহ ধরি।অন্যোন্যে বিলাস রস আস্বাদয়ে করি।।সেই দুই রূপ এব চৈতন্য গোসাঞি।রস আস্বাদিতে দোঁহে হৈলা এক ঠাঁই।।
এছাড়া হিন্দুভক্ত কবিরা রচনা করেছিলেন মঙ্গলকাব্য। কিন্তু এটি হিন্দু-মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের মানুষের কাছেই জনপ্রিয় ছিল। মূলত দেব-দেবীর আরাধনা, মাহাত্ম্য-কীর্তন ও তাদের কাছে মঙ্গল কামনা করেই এই কাব্য রচিত হয়েছিল। মঙ্গলকাব্যের একটি শাখা হলো মনসামঙ্গল। এটি মঙ্গলকাব্যের প্রাচীন ধারা। বেহুলা-লক্ষীন্দরের কাহিনী অবলম্বনে এই কাব্যের সূচনা ঘটেছিল। এর আদি কবি কানা হরিদত্ত। এর কিছু অংশ নিচে দেয়া হলো:
কেহ হাসে কেহ নাচে কেহ গীত গায়শুনিয়া চঞ্চল হইল দেবী মনসায় ||নেতার সঙ্গে পদ্মাবতী যুক্তি করিয়া |কপটে সোনেকার মাসী হইল আসিয়া ||
সমসাময়িক মুসলমান সাধক কবিরা তাদের মত প্রকাশ করার জন্য রচনা করেছিলেন ধর্মসাহিত্য। এছাড়া মধ্যযুগের মুসলিম কবিরা বহু রোমান্টিক প্রণয়োপাখ্যান রচনা করেছিলেন। শাহ মুহাম্মদ সগীর তাদের মধ্যে একজন। তার লেখা ইউসুফ জোলেখা কাব্যগ্রন্থটি বহুলভাবে উল্লেখযোগ্য।
ইছুফে বলিলা দুই বাধা অছে বড়।আজিজক ভয় আর নিরঞ্জন ডরআজিজক কৃপাণ শমন সমসর।শিরছেদ করিয়া পাঠাইব যমঘরধর্মেতে বিরোধ হয় এহি আর ভয়।পরলোকে নরকে ডুবিব অতিশয়
— ইউসুফ জোলেখা
মনসামঙ্গল ছাড়াও মঙ্গলকাব্যের আরো কিছু শাখা হলো চণ্ডীমঙ্গল, অন্নদামঙ্গল, ধর্ম মঙ্গল ও কালিকা মঙ্গল।
এ যুগের শেষের দিকে আবির্ভাব ঘটে লোকগীতি, পুঁথি সাহিত্য, কবিগান, নাথ সাহিত্য, লোকসাহিত্য, টপ্পাগান ও পাঁচালী গানের। এ সময়টি যুগ সন্ধিক্ষণ হিসেবে চিহ্নিত।
মুসলমানরা বাংলায় আসার আগে বাংলা ভাষায় যেসব শব্দের প্রভাব ছিল, তা মূলত তৎসম, অর্ধ-তৎসম, তদ্ভব, অস্ট্রিক (মুণ্ডারি, সাঁওতালি) এবং দ্রাবিড় শব্দ। ১৪০০-১৮০০ সালের মধ্যে মুসলমনাদের হাত ধরেই বাংলা ভাষায় আরবি, ফারসি, তুর্কি ইত্যাদি ভাষার প্রচুর শব্দ প্রবেশ করেছিল। আস্তে আস্তে এই শব্দগুলো বাংলা ভাষার শব্দ ভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করেছে। এছাড়া ইসলাম ধর্মের সাথে সম্পর্কিত নামাজ, রোজা, যাকাতের মতো শব্দ ছাড়াও গোসল, কলম, আদালত, আইন, তারিখ ইত্যাদি শব্দও বাংলাতে প্রবেশ করে। কাব্যেও এর প্রভাব দেখা যায়।
ভারতবর্ষে ইংরেজ শাসনের আগে পর্তুগিজ এবং বার্মিজের বেশ কিছু শব্দও বাংলায় প্রবেশ করেছে। এছাড়া ফরাসিদের সাথে বাণিজ্যের সূত্রেও কিছু ফরাসি শব্দ বাংলাতে যোগ হয়েছিল। তবে, ইউরোপের ভাষাগুলোর মধ্যে ইংরেজি শব্দই সবচেয়ে বেশি বাংলায় প্রবেশ করেছে, যা এখনও চলমান। তাছাড়া ইংরেজদের মাধ্যমে অন্যান্য ভাষা, যেমন- জাপানি, চীনা, জার্মানি, রুশ ইত্যাদি শব্দও বাংলায় ঢুকেছে।
আধুনিক বাংলা (১৮০১-বর্তমান)
আধুনিক বাংলা ভাষার দুটি প্রধান রূপ আছে: সাধু ও চলিত। ১৮০০ সালে কলকাতায় ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে আধুনিক বাংলার যাত্রা শুরু। ১৮০১ সালে উইলিয়াম কেরিকে প্রধান করে এখানে বাংলা বিভাগ খোলা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নে উইলিয়াম কেরি ও তার সহকর্মীগণ গদ্যের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেন, এবং তাদের প্রচেষ্টায় বাংলায় গদ্যের আবির্ভাব হয়। আর এ সময়ই সাধু ভাষার আবির্ভাব ঘটে। মূলত সাধুভাষার আবির্ভাব হয়েছিল ভাষাকে একটি বিধিবদ্ধ রূপ দেয়ার প্রয়াসে।
তবে এখানেও পরিপূর্ণ সাধুভাষা পরিলক্ষিত হয় না। পরবর্তীতে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, মাইকেল মধুসূদন দত্ত, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রমুখ দেশীয় পণ্ডিত ও কবিদের হাত ধরেই সাধু ভাষার আদর্শ রূপ তৈরি হয়। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরকে বলা হয় বাংলা গদ্যের জনক। তার রচিত বর্ণপরিচয় আধুনিক বাংলা বর্ণমালার ভিত্তি গড়েছে।
১৮৬৫ সালে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় দুর্গেশনন্দিনী দিয়ে একটি সাহিত্য বিপ্লবের সূচনা করেন। পরবর্তীতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়সহ প্রমুখ কবি ও সাহিত্যিকগণ এই ভাষায় বিভিন্ন কাব্য, উপন্যাস রচনা করে এ ভাষাকে সমৃদ্ধ করেছেন।
আরএম আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়
comment url