পর্ণ আসক্তি থেকে মুক্তির উপায়
পর্নোগ্রাফি হল অশ্লীল ভিডিও, ছবি বা সাহিত্য। আমাদের দেশে স্কুল কলেজগামী teenager বা অপ্রাপ্তবয়স্কদের ভেতরে এর আসক্তি বা প্রবণতা ব্যাপকভাবে লক্ষ্য করা যায়। তবে প্রাপ্ত বয়স্ক বা বিবাহিতদের মধ্যেও এ অভ্যাস আছে বলে জানা যায়। কিঞ্চিত কিছু ভালো গুণ ছাড়া সর্বোপরি একটি বিকৃত যৌন কামনার প্রকাশ ছাড়া আর কিছুই নয়।
ভূমিকা
পর্নোগ্রাফি হল অশ্লীল ভিডিও, ছবি বা সাহিত্য। আমাদের দেশে স্কুল কলেজগামী teenager বা অপ্রাপ্তবয়স্কদের ভেতরে এর আসক্তি বা প্রবণতা ব্যাপকভাবে লক্ষ্য করা যায়। তবে প্রাপ্ত বয়স্ক বা বিবাহিতদের মধ্যেও এ অভ্যাস আছে বলে জানা যায়। কিঞ্চিত কিছু ভালো গুণ ছাড়া সর্বোপরি একটি বিকৃত যৌন কামনার প্রকাশ ছাড়া আর কিছুই নয়।পাঠক, আজকের আলোচনায় আমরা জানবো কিভাবে পর্ণ আসক্তি থেকে মুক্তি লাভ করা যায়।
পর্ণ আসক্তি কেন ও কিভাবে হয়
সভ্যতা ও আধুনিকতার এমন এক শতাব্দীতে আমরা অবস্থান করছি যেখানে প্রত্যেকের হাতেই একটি স্মার্ট মুঠোফোন পৌঁছে গিয়েছে। মুহূর্তের মধ্যেই আমরা চাইলেই বিশ্বের যে কোন প্রান্তের সাথে যোগাযোগ করে উঠতে পারি। আবার অহরহ জ্ঞান ও প্রযুক্তির সাহায্যে অজানা সব অভিজ্ঞতার সাক্ষী হতে পারি। তথ্য ও সেবা প্রাপ্তির সহজলভ্যতার ফলে আমরা যারা নীতি নৈতিকতাহীন জীবন যাপনে অভ্যস্ত
তাদের একটা বড় অংশ পর্ণ আসক্তিতে যুক্ত হয়ে যাচ্ছি। তবে মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কিশোর ও অপ্রাপ্ত বয়স্করা। ১৩ থেকে ১৯ বছর বয়সী টিনেজারদের ক্ষেত্রে কৌতুহল থাকাটা স্বাভাবিক। পিয়ার প্রেসার, বন্ধু-বান্ধবীর অসৎ সঙ্গ, সঠিক যৌন শিক্ষার অভাব, মানসিক চাপ সামলাতে না পারা, শিশু বয়সে এ সম্পর্কে অল্প হলেও ধারণা পাওয়া, চোখের সামনে অথচ তো কিছু দেখে ফেলা ইত্যাদি কারণে আসক্তি তৈরি হতে পারে।
এছাড়া একাকীত্ব অথবা আকাশ সংস্কৃতির ফলেও এটি হতে পারে। সমবয়সী দল বা বন্ধু বান্ধবের কাছে প্রথম শুনে কৌতুহল জাগে।কৌতুহল থেকে আগ্রহ, আগ্রহ থেকে অভ্যাস, অভ্যাস থেকে আসক্তি এ কটি ধাপে সাধারণত পর্ন আসক্তি আসতে পারে। তাই আপনার সন্তানের বিশেষ যত্নের দিকে মনোযোগী হন। স্মার্টফোন ব্যবহারে সচেতন করুন, ধর্মীয় শিক্ষা দীক্ষা দিন, নৈতিকতার শিক্ষা দিন। কখনো একা ছাড়বেন না।
পর্ণ আসক্তির লক্ষণ ও চিকিৎসা
সন্তান খুব আদরের একটি বস্তু।তবে শাসনের ব্যবস্থাটি একেবারে উদাসীনতায় কাটানো ঠিক হবে না। সন্তান প্রতিপালনের নিরিখে মা হচ্ছে সবচেয়ে কার্যকরী ও কাছাকাছি একজন মানুষ। তাই সন্তানকে সময় দিন। যে সকল আচরণ বা লক্ষণ প্রকাশ পেলে বুঝবেন যে আপনি অথবা আপনার সন্তান পর্ন আসক্তিতে ভূগছেন।তা নিচে আলোচনা করা হলো
- আপনার সন্তান যদি একলা আবদ্ধ রুমে অথবা একাকীত্বে সময় কাটান তবে সতর্ক হোন। তার ব্যবহৃত ডিজিটাল ডিভাইস চেক করুন।
- একাধিকবার যদি উত্তেজক ভিডিও বা প্রদর্শনী দেখার আগ্রহ জাগে।
- যদি নারীকে ভোগ বা কামের বস্ত মনে হয়।
- মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া ও রাত্রিযাপন করা।
- অপবাক্য প্রয়োগ ও নিষিদ্ধ বিষয়ের প্রতি ঝোঁক বৃদ্ধি পায় ।
- অসংলগ্ন যৌন আচরণ বা নোংরা ইশারা প্রকাশ পায়।
চিকিৎসা
- মানসিকভাবে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হোন।
- ধর্মীয় সভা সেমিনার, ধর্মাচরণের উপর জোর দিন।
- ডিভাইসে প্যারেন্টাল কন্ট্রোল বা নিষিদ্ধ সাইট লক করুন।
- বন্ধু বান্ধবের সাথে মেলামেশা বাড়িয়ে দিন।
- সুস্থ ধারার বিনোদন কিংবা নৈসর্গিক দৃশ্য ভ্রমণে বের হোন।
- বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
- সব সময় নিজেকে কর্মব্যস্ত রাখুন।
পর্ণ দেখলে কি ক্ষতি হয়
প্রত্যেকটি বিষয়ের ভালো ও মন্দ দুটি দিক থাকে। পর্ণ বিষয়টিতে কিঞ্চিৎ সুবিধা থাকলেও তা ব্যক্তিত্ব, আচরণ ও মন-মানসিকতার উপরে বড় প্রভাব ফেলে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রত্যেক বিবাহিত পুরুষের ১০ জনের মধ্যে ৯ জনই পর্ণ আসক্তিতে ভোগেন।
তাছাড়া ১০ জন নারীর মধ্যে ৬ জনই পর্ন দেখেন। আমাদের দেশে সাম্প্রতিককালে চালানো গবেষণায় দেখা গেছে স্কুল কলেজগামী ছাত্রছাত্রীর ৮০ জনই একবার হলেও পর্ন দেখেছেন। তবে আসক্তির সংখ্যা ৫০ শতাংশ।
পর্ন দেখলে যে সকল ক্ষতি হয়
- ত্রুটিপূর্ণ ব্যক্তিত্ব লক্ষ্য করা যায়। অপবাক্য প্রয়োগ ও অসামঞ্জস্যপূর্ণ আচরণ লক্ষ্য করা যায়।
- রুগ্ন, পীড়িত ও ভগ্ন স্বাস্থ্য লক্ষ্য করা যায়।
- একাকীত্ব বা মানসিক চাপ বাড়ে।
- মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়, স্বাভাবিক বৃদ্ধি কমে যায়।
- চেহারার উজ্জ্বলতা ও স্মৃতিশক্তি বিলোপ হয়।
- অরুচি ও রাত্রিযাপন বৃদ্ধি পায়।
পর্ণ আসক্তি থেকে মুক্তির উপায়
সমবয়সী বন্ধুবান্ধব মানুষের জীবনে বড় ভূমিকা পালন করে। তাছাড়া পরিবেশ, যৌনশিক্ষা ও লালন পালন একটি বড় বিষয়। তথ্য প্রযুক্তির সহজলভ্যতার এ যুগে ভালো-মন্দ দুই বিষয়ে নিয়ন্ত্রণ ও নৈতিকতা প্রয়োজন। তাই অপ্রাপ্ত বয়স্ক বা কিশোর বয়সে পর্ণ আসক্তিতে ভোগার সম্ভাবনা প্রবল। সমবয়সী বন্ধু-বান্ধবের কাছে প্রথম জানা। এরপর কৌতুহল তারপর আগ্রহ, আগ্রহ থেকে অভ্যাস,অভ্যাস থেকে ধীরে ধীরে আসক্তি।
- একাকীত্ব অবলম্বন না করা। অপ্রাপ্ত বয়স্ক সন্তানকে একলা না ছাড়া।
- স্মার্টফোন বা আধুনিক ডিভাইস প্রয়োজন ছাড়া ব্যবহার করতে না দেওয়া। প্রয়োজনে প্যারেন্টাল কন্ট্রোল করে রাখতে পারেন।
- ধর্মীয় শিক্ষা বা নৈতিক উপদেশ প্রদান।
- খেলাধুলা বা শরীর চর্চার উপরে গুরুত্বারোপ করা।
- সামাজিকতা বা লোক লজ্জার ধারণা দেওয়া।
- সুস্থ ধারার বিনোদনের ব্যবস্থা করা।
- সমাজকর্ম বা সৌখিন কাজকর্মের ব্যাপারে উৎসাহ প্রদান।
- বন্ধুবান্ধব অথবা সমবয়সী দল নির্বাচনে সহায়তা করা।
- কর্মব্যস্ত থাকা।
সর্বোপরি মানসিকভাবে শক্তিশালী হওয়ার বিকল্প নেই। তবে আশা করা যায় উপরিক্ত ১০ টি সুপারিশ মেনে চললে খুব কম সময়ে পর্ণ আসক্তি থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
তাছাড়া শয়তানের কাছে পানাহ্ চেয়ে নিম্নস্থ দোয়াটি পড়া যেতে পারে
"আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযুবিকা মিন শাররী মানিয়ে"।
অর্থ-হে আল্লাহ্, আমি বীর্যের অনিষ্টতা থেকে তোমার কাছে পানাহ্ চাইছি।
উপসংহার
রুচিশীল, সৃজনশীল ও সামাজিক ব্যক্তিত্ব ধারণের জন্য নিষিদ্ধ বিষয়সমূহ অবশ্যই পরিত্যাজ্য। নেতিবাচক বা চরিত্রে প্রভাব ফেলতে পারে এমন বিষয় থেকে সাবধানে থাকুন। আপনার বৃহত্তর সম্ভাবনা ও ব্যক্তিত্ব নির্ধারণে পর্ন আসক্তি থেকে দূরে থাকুন। সম্ভাব্য যেসকল বিষয় এড়িয়ে চললে নিজেকে অপরের কাছে মাননীয় এবং গ্রহণযোগ্য করে গড়ে তুলতে পারবেন সেসব বিষয়ে মনোযোগী হন। তাছাড়া এ বদঅভ্যাস ব্যক্তি, সমাজ ও দেশের উপরে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
লেখকের মন্তব্য
সম্মানিত পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, পর্ণ আসক্তি সামাজিক বা ধর্মীয় উভয় দিক দিয়েই গর্হিত একটি কাজ। তাই এর করাল গ্রাস থেকে নিজেই এবং অনাগত প্রজন্ম ও হালের প্রজন্মকে বাঁচাতে সোচ্চার হোন। আশা করি উক্ত আলোচনাটি আপনাদের উপকারে আসবে। লাইক কমেন্ট ও শেয়ার করে আমাদের সাথেই থাকুন। ধন্যবাদ।
আরএম আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়
comment url