ইসরাইল ফিলিস্তিন দ্বন্দের বর্তমান অবস্থা

ঘটনাটির শুরু ১৯৪৮ সালের মে মাসে। বিশ্বের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে ছিটে থাকা ইহুদিদের একত্র করে মধ্যপ্রাচ্যের একটি জায়গা নির্ধারণ করা হয়। বর্তমানে ফিলিস্তিন অধ্যুষিত অঞ্চল পশ্চিম তীর ও গাঁজা উপত্যকা ইহুদিদের বসতি হবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
ইসরাইল ফিলিস্তিন দ্বন্দের বর্তমান অবস্থা

ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ইতিহাস

১৯১৭ সালে তুরস্কের বাহিনীকে পরাজিত করে ফিলিস্তিন অধিকার করে ব্রিটেন। ১৯১৭ থেকে ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত ফিলিস্থিন ব্রিটেনের অধিকার ছিল ।ঘটনাটির সূত্রপাত অনেক আগে হলেও ১৯৩০ এর দশকে পোল্যান্ড থেকে আসা ইহুদিরা ফিলিস্তিনে খামার গড়ে তুলেছিল। যদিও ধারণা করা হয় যে, রোমান সময় থেকেই তাদের একটি অংশ আরব ভূখন্ডে বসবাস করত।

পোল্যান্ড থেকে আসা ইহুদীরা ফিলিস্তিনের জমিজমা কিনতে শুরু করে এবং বসতি করে তুলতে থাকে। ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সময় প্রায় সাড়ে ৭ লাখ ফিলিস্তিনি বাস্তবচ্যুত হয়েছিল। ত্রিশের দশকে ফিলিস্তিনিরা বুঝতে পারলো তারা তাদের একটি বড় অংশ হারাতে চলেছে। ১৮৯৭ সাল থেকেই ইহুদিরা চাইতো একটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য। তাই নানা ঘটনার মধ্য দিয়ে তারা একটি পরিস্থিতি তৈরি করতে চাইত যাতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তাদেরকে একটি স্বতন্ত্র আবাসভূমি দান করতে বাধ্য হয়।

১৯৩৩ সালে জার্মান প্রশাসক হিটলার কর্তৃক ইহুদিদের উপরে ব্যাপক নির্যাতন শুরু হলে ইউরোপ হতে বোঝাই করা জাহাজে লক্ষ লক্ষ ইহুদি ফিলিস্তিনি বসতি দেয়া শুরু হয়। এই ঘটনার সূত্র ধরে তৎকালীন ব্রিটেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আর্থার জেমস বেলফোর ইহুদিবাদী আন্দোলনের নেতা ব্যারন রটস চাইল্ডকে এটি শ্বেতপত্র প্রদান করেন।

যাকে কূটনীতির ভাষায় "বেলফোর ডিক্লারেশন "হিসেবে আখ্যা দেয়া হয়। এরপরে ১৯৪৮ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ১৮১ নং ধারা অনুযায়ী জন্য একটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবি উত্থাপন করা হয়। প্রবল প্রতিরোধের মুখে তৎকালীন ক্ষমতাবান রাষ্ট্রগুলোর একক সিদ্ধান্তে মধ্যপ্রাচ্যে আরব ভূখন্ডে একটি ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা হয়। তৎকালী সদস্য ভুক্ত ১৯৪ টি রাষ্ট্রের মধ্যে ১৬৪ টি রাষ্ট্র ইসরাইলকে স্বাধীন এবং সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।

২৬ টি আরব রাষ্ট্র এর বিরোধিতা করে। এরপরও নানা অসম বন্টনের মাধ্যমে ইসরাইল প্রতিষ্ঠা হয়। জনসংখ্যা অনুপাতে ইহুদিরা ১০% জমির মালিকানা প্রাপ্তির কথা থাকলেও তাদেরকে দেওয়া হয় মোট ভূখণ্ডের অর্ধেক।এভাবেই একটি রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে অপর একটি রাষ্ট্র জোরপূর্বক সৃষ্টি করা হয়।

ইসরাইল ফিলিস্তিন দ্বন্দ্বের ইতিহাস 

একটি পবিত্র ভূমি জেরুজালেম। যা মুসলমান ইহুদি ও খ্রিস্টানদের নিকট সমানভাবে পবিত্র। ইহুদি ও খ্রিস্টানরা বিশ্বাস করে জেরুজালেমে অবস্থিত টেম্পল মাউন্টে যীশু খ্রীষ্টের জন্ম ও মৃত্যু পরবর্তী সমাহিত করা হয়। তাই এটি গুরুত্বপূর্ণ। আর মুসলিমরা বিশ্বাস করেন, হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম জেরুজালেমে জন্মগ্রহণ করেন 

এবং বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ অঞ্চলটি থেকেই মেরাজে গিয়েছিলেন। মুসলিমদের নিকট মসজিদ আল আকসা তৃতীয় সর্বোচ্চ পবিত্র ধর্মীয় স্থাপনা হিসেবে বিবেচিত। এতে এসবের ঊর্ধ্বে আরো একটি বিষয় ইসরাইল ফিলিস্তিন দ্বন্দ্বের মূলে তাহলো জেরুজালেম উদ্ধার।১০৯৫ সাল থেকে ১২৯১ সাল পর্যন্ত সংঘটিত ক্রুসেড আজকের সংঘাতের সূত্রপাত ছিল। 

আরব ভূখণ্ডে জোরপূর্বক ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করলে প্রতিহতের চেষ্টা চালায় আরব রাষ্ট্রগুলো। কিন্তু প্রবল বাধা সত্বেও শেষ পর্যন্ত এটি ইহুদীবাদী রাষ্ট্রের জন্ম হয়। ১৯৬৫ সালে মিশর জর্ডান ও ফিলিস্তিনের সাথে ইসরাইলে দ্বন্দ্ব হয়। মূলত মুসলিম আধিপত্য রোধ ও অর্থনৈতিক বিকাশের কারণেই আরব ভূখন্ডে রাষ্ট্রটি প্রতিষ্ঠা করেছিল ইহুদিবাদীরা।

ইসরাইল ফিলিস্তিন দ্বন্দ্বের কতিপয় কারণ সমূহ

  • আরব বিশ্বে অবৈধ দখলদারিত্ব।
  • আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে সংখানুপাতিক হারের চাইতে অতিরিক্ত ভূমি ইহুদিদের দেয়া।
  • পবিত্র ভূমি জেরুজালেম ও মাসজিদ আল আকসার বিষয়ে মীমাংসা ও নিষ্পত্তি না করা।
  • গাযা অধিকারের প্রচেষ্টা।
  • সাম্রাজ্যবাদ বিস্তারের অব্যাহত প্রচেষ্টা।
  • নির্বিচারে হামলা ও গুলি বর্ষণ।
  • মসজিদ আল-আকসা ওপরে মুসলিমদের অধিকার হরণ ও ইবাদতে অস্বীকৃতি।

ইসরাইল ফিলিস্তিন দ্বন্দের বর্তমান অবস্থা

১৯৭৬ সালের ৬ অক্টোবর আরব দেশগুলোর জোট ইসরাইল অধিকৃত অঞ্চল সমূহে হামলা চালিয়েছিল। চলতি বছরের ৭ অক্টোবর পুনরায় ইহুদিদের পবিত্রতম দিন "ইউম কিপুর "এ হামলা চালায় ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস। তাই পূর্ব এবং পরের হামলার মাঝে প্রশ্ন এটি যুদ্ধের ছাপ দেখছেন বিশ্লেষকরা। হতেও পারে এটিকে কেন্দ্র করে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ এমনটাই মনে করেন একদল। 

বিখ্যাত সংবাদ মাধ্যম আল জাজিরাকে দেয়া সাক্ষাৎকারে ইসরাইলের আইন প্রণেতা ড্যানি ডেনন জানান, -আজ আমাদের ছুটির দিনে ২০০ ইহুদি প্রাণ গেল। এখন ফিলিস্তিন ও গাজাকে এটি ভাবতে হবে এ দায় কাদের? তাদের চরম মূল্য দিতে হবে। চলমান সংঘাতে দাঁড়ানো জন্য ইসরাইলের সামনে চারটি রাস্তা আছে।
প্রথমত, ইসরাইলের হাতে বন্দি হামলার দায়ে আটককৃত ফিলিস্তিনিদের ক্ষমা ও মুক্তির বিষয়ে আলোচনা। যা ইসরাইলের হাতে।
দ্বিতীয়ত,গাজায় হামাসকে লক্ষ্য করে ব্যাপক হামলা চালানো যারা অসুস্থ আটকা পড়ে আছে তাদের উদ্ধার।
তৃতীয়ত, গাজা উপত্যকায় প্রচন্ড প্রতিরোধ ব্যবস্থা করে তোলা। যেখানে অবকাঠামো কত ক্ষয়ক্ষতি ও মানবিক বিপর্যয় ঠেকানো সম্ভব হয়।
চতুর্থত,একটি শান্তি চুক্তি ও দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধবিরতির ঘোষণা।যা পরিস্থিতিকে আরো স্থিতিশীল বেগবান করবে। কিন্তু চলমান পরিস্থিতিতে বৈশ্বিক চিন্তাভাবনা ও অবস্থান বর্তমান পরিস্থিতিকে আরো ভাবাচ্ছে।জাতিসংঘ সহ ক্ষমতাধর রাষ্ট্রগুলোর তেমন কোন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেই বললেই চলে। তাই সর্ব সাফল্যে বলা যায়, ইসরাইল ফিলিস্তিন সংকট রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের মতই একটি দীর্ঘস্থায়ী ও ব্যাপক পরিস্থিতি তৈরি করতে যাচ্ছে। 

লেখকের মন্তব্য -

সম্মানিত পাঠকবৃন্দ, সাম্প্রতিক সংঘটিত ইসরাইল ফিলিস্তিন দ্বন্দ্ব সম্পর্কে অতীত হতে বর্তমান পর্যন্ত একটি বিস্তৃত ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। আলোচনাটি আশা করি আপনাদের উপকারে আসবে। এমন অনেক বিষয় জানতে আমাদের সাথে থাকুন। ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আরএম আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়

comment url