শীতে প্রয়োজন শিশুর বাড়তি যত্ন

মৌসুমের মধ্যে শীত হচ্ছে সবচেয়ে শুষ্ক ও রুক্ষ একটি সময়কাল।যখন বাড়তি যত্নের প্রয়োজন হয়। শীতকালে বাতাসে আর্দ্রতা কমে যায় ফলে শুষ্কতা বাড়ে। আবহাওয়ার শুষ্কতা ও নানান রোগের প্রাদুর্ভাব এ সময়ে চিন্তান্বিত করে তোলে। যেহেতু মানব শরীরের একটি বড় অংশই হলো ত্বক।তাই ত্বকের যত্ন শীতকালেই নিতে হয়। আসুন,কিভাবে, কোন পদ্ধতিতে শীতকালে ত্বকের যত্ন নেওয়া যায়।
শীতে প্রয়োজন শিশুর বাড়তি যত্ন

শীতকালে ত্বকের যত্নে ঘরোয়া উপায় 

শীতকালে আমাদের প্রধান সমস্যা হচ্ছে কম পানি পান করা। আর এ সমস্যা হতেই শুরু হয় ত্বকের সমস্যা। আপনি যদি শীতকালের একটি সুস্থ ত্বক ও রীতিমতো উজ্জ্বলতা পেতে চান তবে ঘরোয়া ভাবে কিছু টিপস রয়েছে যেগুলো অনুসরণ করলে আপনি উত্তম ফলাফল পেতে পারেন। শীতকালে ত্বককে মশ্চারাইজ রাখা অত্যন্ত জরুরী। তাই প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা প্রয়োজন।

অন্য সময়ের চাইতে দ্বিগুণ পানি পান করলে আরো ভালো। ফলে দেখা যায় ত্বকে মশ্চারাইজেশন বা প্রাকৃতিক আর্দ্রতা ফিরে। দইয়ের ঘোল, শসা, নারিকেল তেল, ক্যাস্টর তেল, অলিভ অয়েল ইত্যাদি ময়েশ্চারাইজেশন স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। তাছাড়া রাতে শোবার পূর্বে এবং গোসলের পর মশ্চারাইজেশন সমৃদ্ধ বডি লোশনগুলো ইউজ করা প্রয়োজন।

শীতকালে ত্বকের যত্ন কিভাবে নেব

শীতকালে একটি রুক্ষ মৌসুম। অন্য ঋতুর চাইতে বাতাসে আদ্রতা বা জলীয় বাষ্প কম থাকে। তাই ত্বক খসখসে হয় ও ফেটে যায়। ত্বকের যত্নে অবহেলা করলে একটি শুষ্ক ত্বক আপনার অসুবিধা করতে পারে। তাছাড়া আপনার সৌন্দর্য নষ্ট করে দিতে পারে।

শীতকালে কতিপয় বিষয় অনুসরণ করলে ত্বক সুস্থ স্বাভাবিক ও কাঙ্খিত রাখা সম্ভব। নিচে এ বিষয়ে আলোচনা করা হলো:
  • সকালে দেরিতে ঘুম থেকে উঠুন। খানিকটা রোদ্র উঠলে বাইরে বেরিয়ে আসুন। সকাল বেলার মিষ্টি রোদ গায়ে মাখুন।
  • প্রোটিন জাতীয় খাবার যেমন ডিম, দুধ, মাছ, মাংস, ডাল, সবজি ইত্যাদি বেশি করে খান। স্নেহ জাতীয় খাবার যেমন ঘি, আচার খান।
  • শীতকালে ত্বকের যত্নে মধুর গুরুত্ব অনেক। সকাল সন্ধ্যা দুই চামচ মধু খান এবং গায়ে মাখুন।
  • ময়েশ্চার লক করতে পারে এমন ক্রিম ব্যবহার করুন। তাছাড়া সান ক্রিম অথবা ফেসপ্যাক ব্যবহার করতে পারেন।
  • কুসুম গরম পানিতে গোসল করুন।
  • শীতকালে ১১ টা থেকে সাড়ে বারোটা এই সময়টির ভিতরে গোসল করুন।
  • গোসলের পূর্বে সরিষার তেল গায়ে মেখে স্নানে যান। এরই উত্তম ফলাফল প্রদান করে।
  • ঠান্ডা লাগাবেন না। ঘরের বাইরে গেলে গরম কাপড় ব্যবহার করুন। তাছাড়া রাত্রিযাপন এবং বাইরে অবস্থান থেকে বিরত থাকুন।
  • শরীরকে হাইড্রেট রাখতে বেশি বেশি পানি পান করুন। মনে রাখবেন বেশি পানি পান করলেই কেবল শীতকালে শরীর সুস্থ থাকে।
  • হাতে এবং পায়ে মোজা পরিধান করুন।৩.শীতে ত্বকের যত্নে ক্রিমশীতকালে শুষ্ক ত্বক থেকে বাঁচতে ক্রিম ব্যবহারের গুরুত্ব অনেক। ত্বকের স্বাভাবিকতা বজায় রাখতে পানি পানের মাধ্যমে শরীরকে মশ্চারাইজ রাখা প্রয়োজন। তাছাড়া শীতকালে কোল্ড ক্রিম ব্যবহার ত্বকের জন্য উপকারী। ত্বকের জ্বালাপোড়া দূরীভূত করতে কোল্ড ক্রিম দারুন কাজের।বহুমাত্রিক উপকারের অংশ হিসেবে কোল্ড ক্রিম শুষ্ক ত্বকে আর্দ্রতা ফেরায়। ক্লিনজার হিসেবেও কোল্ড ক্রিম ব্যবহৃত হয়ে আসছে।শীতকালে সাধারণত তিন ধরনের ক্রিমের ব্যবহার দেখা যায়। কোল্ড ক্রিম, নাইট ক্রিম, সান ক্রিম।
  • কোল্ড ক্রিম :ত্বকের যত্নে কোল্ড ক্রিম এর গুরুত্ব অনেক। ত্বকের শুষ্কতা সরাতে এবং আর্দ্রতা ফেরাতে কোল্ড টিমের জুড়ি মেলা ভার। কোল্ড ক্রিমের মূল উপাদান হলো অলিভ অয়েল, পানি ও বিসওয়াক্স।এ তিন উপাদানের সমন্বয়ে ত্বকের উজ্জ্বলতা ফিরে আসে। তবে যাদের ত্বক অতিরিক্ত তৈলাক্ত তাদের ক্ষেত্রে কোল্ড ক্রিম না ব্যবহার করাই ভালো।
  • নাইট ক্রিম :নাইট ক্রিম মূলত healing agent হিসেবে কাজ করে। শীতের রুক্ষতা থেকে ত্বকের ক্ষয়ক্ষতি সারাতে নাইট ক্রিম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে । এছাড়া প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও উপকরণ সরবরাহ করে।
  • সান ক্রিম :সানস্ক্রিমে sun protective agent থাকায় সান ক্রিম সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি থেকে রক্ষা করে। তাছাড়া শীতকালে সূর্য খাড়াভাবে রশ্মি দেয়ায় ত্বক ঝলসে যায়। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য সান ক্রিম ব্যবহারের অতি প্রয়োজন।

শীতে ত্বকের যত্নে অলিভ অয়েল

  • ত্বকের যত্নে অলিভ অয়েল অত্যন্ত কার্যকরী। এতে রয়েছে প্রচুর এন্টিঅক্সিডেন্ট,ভিটামিন সি ও এ । যা ত্বকের চিকিৎসা ও সুস্থতার পক্ষে অত্যন্ত সহায়ক। এটি ত্বকের গভীরে গিয়ে ভেতর থেকে উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনে। ত্বক করে কোমল ও মসৃণ।ফলে শীতকালেও ত্বক দেখায় দারুন কোমল।ত্বকের যত্নে অলিভ অয়েল অতুলনীয়।
  • ত্বক কোমল ও নরম রাখতে অলিভ অয়েল থাকে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও এসেনশিয়াল ফ্যাটি অ্যাসিড। এ তিল ত্বকে মাখলে ত্বক নরম করে সেই সাথে বজায় রাখে ত্বকের আর্দ্রতা। অলিভ অয়েল ত্বকের গভীরে গিয়ে ক্ষতি হওয়া কোষের উন্নতি সাধন করে এবং তাকে পুষ্টি সরবরাহ করে। তাকে রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে তোকে করে প্রাণবন্ত।
  • ত্বক উজ্জ্বল করতেউজ্জ্বল প্রাণবন্ত ও সতেজ ত্বক পেতে হলে মশ্চারাইজার ধরে রাখতে হবে। যে কাজে আপনাকে সাহায্য করবে অলিভ অয়েল।ত্বকের পোরসে জমে থাকা তেল ও ময়লা বের করে আনতে অলিভ অয়েল ভালো পরিষ্কারক হিসেবে কাজ করে।
  • মেকআপ রিমুভার হিসেবে অলিভ অয়েল
  • অতিরিক্ত তৈলাক্ত ত্বক কিংবা ত্বকের গভীরে জমে থাকা ধুলোবালি ও ময়লা পরিষ্কারে অলিভ অয়েল খুব কার্যকরী। একে পরিস্কার বাটিতে অলিভ অয়েল ঢেলে তাতে একটু তুলো চুবিয়ে মুখের উপর আলতো করে ঘষুন।দেখবেন আপনার ত্বক দারুন পরিষ্কার হয়েছে সাথে মেকাপের সবটুকুই উঠে গেছে। ক্লিনজার হিসাবে অলিভ অয়েলের স্থলাভিষিক্ত কিছু নেই।
  • স্ট্রেস মার্ক দূর করতে স্টেস মার্ক হলো শরীরে ফাটা দাগ। স্ট্রেসমার্কের সমস্যায় ভোগেন অধিকাংশ নারী পুরুষই। এ সমস্যা থেকে সমাধানে অলিভ অয়েল অনেক কার্যকরী। মোটা থেকে চিকন কিংবা মাতৃত্বকালীন স্ট্রেস মার্ক অপসারণে অলিভ অয়েল ব্যবহার করতে পারেন। শরীরের ফাটা থাকে নিয়মিত অলিভ অয়েল ব্যবহারের ফলে দাগ সম্পূর্ণ মুছে যায়।

শীতকালে তৈলাক্ত ত্বকের যত্ন

তৈলাক্ত ত্বকধারী ব্যক্তি গরম ও শীতকালে সমানভাবে সমস্যায় পড়েন। তৈলাক্ত ত্বক থেকে মুক্তির জন্য প্রচুর পানি পানের বিকল্প নেই। তৈলাক্ততা অপসারণে টোনার ব্যবহার করা যেতে পারে। মশ্চারাইজার অবশ্যকীয়।স্ক্রাবিং করালে ভালো ফল পাওয়া যায়। অ্যালোভেরা বেটে মুখে মাখলে তৈলাক্ততা কেটে যায়। নারকেল তেল, ভিটামিন ই, টি ট্রি ওয়েল ব্যবহারে তৈলাক্ততা অনেকাংশে দূর করা সম্ভব। তাছাড়া সান ক্রিম ব্যবহারের বিকল্প নেই।

শীতে প্রয়োজন শিশুর বাড়তি যত্ন

শিশুর ত্বক অতি কমল হওয়ায় শীতের প্রভাব সরাসরি পড়তে দেখা যায়। বাচ্চার ত্বক মশ্চারাইজ রাখতে ঈষৎ উষ্ণ পানি দিয়ে বাচ্চাকে গোসল করান। ভালো মানের বেবি লোশন, গ্লিসারিন, ময়েশচার ওয়েল মাখানো যেতে পারে। তাছাড়া গরম কাপড় পড়ানো ও স্কিনের পক্ষে সহনশীল ক্রিম ব্যবহার করা যেতে পারে।

লেখকের মন্তব্য -

যেহেতু আর পাঁচটি ঋতুর চেয়ে শীতকালে ত্বকের জন্য বাড়তি যত্নের প্রয়োজন হয়। সেদিকে খেয়াল রেখে শীতকালে ত্বকের যত্ন সংক্রান্ত খুঁটিনাটি আদ্যপ্রান্ত আলোচনায় ঠাঁই পেয়েছে। আশা করি আলোচনাটি আপনার জন্য উপকারী হবে। লেখাটি ভালো লাগলে লাইক, কমেন্ট, শেয়ার করে সাথেই থাকুন। ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আরএম আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়

comment url